১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ০১:০৬:২৭ পূর্বাহ্ন


অবৈধ পথে পাচার করা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার হিড়িক আমলাদের
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১০-২০২৩
অবৈধ পথে পাচার করা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার হিড়িক আমলাদের ফাইল ফটো


বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে অর্থ পাচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আমলা, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি গাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেনার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব বরুণ দেব মিত্রের (বিডি মিত্র) তিনটি বাড়ি জব্দ ও ব্যাংক হিসাব স্থির করার পর একের পর এক তথ্য বেরিয়ে আসছে। শুধু বিডি মিত্র নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আমলা, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকের সম্পত্তির ওপর নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পাচারকৃত অর্থে বাড়ি ক্রয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের অনেকেই সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড লাভ করেছেন। ইতোমধ্যে ১৬ জনের সম্পদ ও সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা। যারা বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছেন তাদের একটি দীর্ঘ তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে গত ১৪ বছরে দেশ থেকে যত টাকা পাচার হয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী টাকা পাচার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে গত দুই বছরে। হুন্ডির মাধ্যমে ভারত ও সিঙ্গাপুর হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে দেশটিতে কথিত বিনিয়োগের নামে। অধিকাংশ অর্থই বিনিয়োগ হয়েছে রিয়েল এস্টেট খাতে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীরা সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড লাভ করেছেন। তাদের এই বিনিয়োগ নিউইয়র্কে কিছুটা দৃশ্যমান হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে ব্যাঙের ছাতার মত ছড়িয়ে পড়েছে। নিউইয়র্কের বাইরে পাচারের টাকায় নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ক্যানসাস, মিশিগান ও ইলিনয় রাজ্যে বাংলাদেশিরা রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করেছেন বহু বাংলাদেশি।

ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করার বেশকিছু পথ খোলা আছে। ইবি-৫ ক্যাটাগরিতে ৯ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড পাওয়া যায়। ইবি-২ পদ্ধতিতেও বিনিয়োগ করা যায়। কিন্তু গ্রিনকার্ড পাওয়া যায় না। ইবি-৯ পদ্ধতি অনেকটা কঠিন। এই বিনিয়োগে বৈধপথে সব টাকা আনতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে বৈধপথে এক টাকাও আনার অনুমতি নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করতে বৈধ আয় দেখাতে হয় না। নানাভাবে এ দেশে টাকা বৈধ করা যায়। এ কারণে রিয়েল এস্টেট খাতের বিনিয়োগকেই বেছে নিয়েছেন পাচারকারীরা। হাজার হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসছে এবং রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে।

সূত্রটি জানায়, অনেকে দেশ থেকে এসে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কীভাবে বিনিয়োগ করা যায়, কীভাবে গ্রিনকার্ড লাভ করা যায়, সেই খোঁজ নিচ্ছেন। অথচ তাদের বৈধভাবে টাকা আনার কোনো সুযোগ নেই জানার পরও যে কোনোভাবে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের অর্থের উৎস্য কী সে ব্যাপারে প্রশ্ন করলে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী সদুত্তর দিচ্ছেন না। তবে অনেকে বলছেন, বাংলাদেশে থাকার পরিবেশ নেই। দেশ চরম অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও বিদেশে পাড়ি জমাতে চান ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায়।

সম্প্রতি ভ্রমণ ভিসায় প্রচুর বাংলাদেশি নিউ ইয়র্কে আসছেন। তারা বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও রিয়েলটরকে ফোন করে বাড়ি কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বৈধ ইনকাম ছাড়া বাড়ি কেনা সহজ নয় জানার পরও তারা কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নিজের নামে কেনা যাবে কীনা তাও জানতে চাইছেন। তাদের অধিকাংশই নগদে বাড়ি কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিনি জানান, দুই ফ্যামিলি হাউজ কিনতে হলে কমপক্ষে ৮ লাখ ডলার লাগে। কিন্তু ভ্রমণে আসা বাংলাদেশিদের কথা শুনে মনে হয়-আট লাখ ডলার তাদের কিছুই না। তবে বিপুল বাংলাদেশি নগদ অর্থে নিউ ইয়র্কে বাড়ি কিনছেন বলে শোনা যাচ্ছে বলে জানান ওই রিয়েলটর। তিনি বলছেন, এক্ষেত্রে হয়তো তারা স্থানীয় কাউকে কো-সাইনার হিসাবে রাখছেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সাধারণ কারো এত বিপুল অর্থবিত্ত থাকার কথা নয়। এসব রাষ্ট্রের টাকা কী না খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। তবে শুনেছি- যুক্তরাষ্ট্র সরকার এসব বিনিয়োগের উৎস্য খুঁজতে শুরু করেছে।

একাধিক সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের নিরাপদ স্থান এখন নিউ ইয়র্ক। পাচার হওয়া টাকা প্রথমে ভারত, পরে সিঙ্গাপুর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে। সিঙ্গাপুর থেকে বৈধপথে টাকা ঢুকছে যুক্তরাষ্ট্রে। সিঙ্গাপুরে পেশাদার হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তাদের বছরের পর বছর পুরনো ব্যবসায় বিনিয়োগের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছেন। এখানে আসার পর বৈধ অর্থ হিসাবেই ইবি-৯ ক্যাটাগরিতে আবেদন করে সপরিবারে গ্রিনকার্ড হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকারের সাবেক সচিব বিডি মিত্রের বাড়ি জব্দ করার মাধ্যমে প্রতারণার এই নতুন কৌশলটি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় জড়িত অনেকের তালিকা এখন সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দাদের হাতে। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় কঠিন অপরাধ। ফলে যারা জড়িত, তাদের কঠিন শান্তির আওতায় আনা হতে পারে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীর তালিকায় রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার লোক রয়েছে। নিউইয়র্কে তাদের অর্থ পাচারের কাজে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি এজেন্ট রয়েছে, যারা সারা বছর যুক্তরাষ্ট্রে বেকার থেকেও একাধিক গাড়ি ও বাড়ির মালিক বনে গেছেন। কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাতা সেজে দান-খয়রাত করছেন।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, জর্জিয়া ও ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং এমপির একাধিক বাড়ি কেনার খবর বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এসেছে। কয়েকজন আমলার বাড়ি কেনার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন নেতা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, বাংলাদেশে বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক আমলার দায়িত্ব পালন করছেন, নিউইয়র্কে সম্প্রতি তার একাধিক বাড়ি কেনার খবর শোনা যাচ্ছে। তার হয়ে একজন ভারতীয় বাঙালি রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করেছেন। তার এই বিনিয়োগের অর্থ ভারত ও সিঙ্গাপুর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পাচারকারীর তালিকায় ইতিমধ্যে এই রাজনৈতিক নেতার নামও উঠে এসেছে। বিডি মিত্রের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ধারাবাহিকতায় তার সম্পত্তিও জব্দ হতে পারে। এক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্যের নাম, যার নিউ ইয়র্কে একাধিক বাড়ি রয়েছে নামে-বেনামে।

বাংলাদেশের নামী দামি পত্রিকার সংস্করণ প্রকাশের নাম করেও প্রচুর পরিমাণ অর্থ পাচার করা হচ্ছে। অর্থ পাচারের এটাই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক বাড়িসহ ঢাকায় বেশ কয়েকটি ফ্লাট কেনার খবর পাওয়া গেছে।  

এছাড়াও নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কমপক্ষে ৫ জন সাংবাদিকের বাড়ির তালিকা পেয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সম্পাদক রয়েছেন। আরো রয়েছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক দম্পতির নাম। ইবি-৩ ক্যাটাগরিতে আবেদন করে ওই সাংবাদিক দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড লাভ করেছেন। এর কিছুদিনের মাথায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বাড়ি কিনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বৈধ আয়ের উৎস খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও কানাডায় সবচেয়ে বেশী অর্থ পাচার হতো। বেগমপাড়া আলোচনায় আসার পর সে দেশের সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এখন আর বিদেশি কেউ দেশটিতে বাড়ি কিনতে পারছে না। এ কারণে বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে পাচারকারীদের পছন্দের স্থান হিসাবে রয়েছে নিউইয়র্কের নাম। বিপুল বাংলাদেশির বসবাস হওয়ায় নিজের নামে কিনতে না পারলেও বিভিন্ন স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নামে তারা বাড়ি কিনছেন। পরে বিক্রি করে অর্থ বৈধ করে নিচ্ছেন।

একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে, বাংলাদেশের পাচারকারীদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বল্পসময়ের জন্য সাক্ষাত করেছেন। ওই বৈঠকের খবর সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে বৈঠকটি ছিল রাজনৈতিক। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, ওই বৈঠকটি ছিল অর্থ পাচারকারীদের তালিকা নিয়ে। বৈঠকে সরকারের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী, এমপি, আমলা, রাজনীতিক ও অন্যান্য বাংলাদেশির তথ্য তুলে ধরে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানা গেছে।

বিডি মিত্রের সম্পত্তি জব্দ : যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক সিনিয়র সচিব বিডি মিত্রের সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার আয়ের বৈধ উৎস জানাতে না পারায়, তার বাড়ী এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দূর্নীতিবিরোধী অভিযানের আওতায় সাবেক এই সচিবের তিনটি বাড়ী এবং একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এ অভিযানে সামনে আরো বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি সাবেক আমলা ও ব্যবসায়ীর সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া চলছে ।

বিডি মিত্র ১৯৮২ ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা। স্বেচ্ছায় অবসর নেন ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর। এরপর উত্তর আমেরিকাই তার ঠিকানা। কখনো নিউইয়কের্, কখনো কানাডায় থাকেন। পেনশনের টাকা উত্তোলনের আবেদনে নিজেকে অর্থকষ্টে থাকা গরীব অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। অথচ তার স্ত্রী রাখি মিত্রের নামে নিউইয়র্কে তিনটি বাড়ী আর কানাডায় দুটি বাড়ীর সন্ধান পাওয়া যায়। ২ মিলিয়ন ডলার নগদ পরিশোধ করে নিউইয়র্কের জ্যামাইকা এবং ফরেস্ট হিলে তিনটি বাড়ী কিনেছিলেন। সে সব বাড়ী জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন । কানাডার টরেন্টোতে ৩ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার দিয়ে বাড়ী কিনেছেন দুটি।

বিডি মিত্র নিউইয়র্কে নাসির আলী খান পলের কাছ থেকে প্রথম বাড়ীটি কেনেন ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ঐ বাড়ীর মূল্য ৭৬০,০০০ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৬ কোটি  ৪৬ লাখ টাকা) নগদে ক্রয় করেন। বাড়ীর ঠিকানা ৮৭-৩০ ১৬৯ স্ট্রিট কুইন্স। দ্বিতীয় বাড়ী (৮৫-২৭, ১৬৮ প্লেস, জ্যামাইকা) কেনেন ঐ বছরের ডিসেম্বরে। ঐ বাড়ীর মুল্য ৭৮৫,০০০ ডলার। ঐ অর্থও নগদে পরিশোধ করা হয়। ১১৩-৮১ অ্যাভিনিউ কিউ গার্ডেনস ঠিকানার তৃতীয় বাড়ী কেনেন ২০১৮ সালের ১২ জুন। ইয়েলেনা সেডিনার কাছ থেকে ঐ বাড়ী কেনা হয় ৭ লাখ ৭৫ হাজার ডলারে।

২০১৭ এর নভেম্বরে অবসর গ্রহণের মাত্র দুমাসের মধ্যে কানাডার টরেন্টোতে কেনেন ১৪ লাখ ডলার (কানাডিয়ান) দিয়ে একটি বাড়ী। সর্বশেষ ২০১৯ সালে টরেন্টোতেই ৯ লাখ কানাডিয়ান ডলার দিয়ে কিনেছেন আরো একটা বাড়ী। বিডি মিত্রের জন্মস্থান হবিগঞ্জ। ১৯৮৬ সালের ২৭ অক্টোবর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ২০১২ সালে তদ্বির করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে ইকোনমিক মিনিস্টার পদে নিয়োগ পান। চাকরি জীবনে যেখানেই গেছেন সেখানেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। কিন্তু এসব অভিযোগের পরও তিনি সিনিয়র সচিব পর্যন্ত পদোন্নতি পেয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী তার সেদেশে সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বিডি মিত্র অধিকাংশ সময়ে নিউইয়র্ক এবং কানাডায় থাকেন। তবে মাঝে মধ্যে দেশে থাকেন। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই।

পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের : যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অর্থ যারা পাচার করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে দেশটি। বাংলাদেশের পাঁচ শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে তাদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। আয়ের বৈধ উৎস জানাতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আওতায় এসব সম্পদ জব্দ করা হয়। পর্যায়ক্রমে এই তালিকা লম্বা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে তদন্তে নেমেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই)। ১৫ জন বাংলাদেশিকে সন্দেহের তালিকায় রেখে তাদের অর্থ পাচারসহ দুর্নীতি নিয়ে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছিল এফবিআই। অবশেষে তারা প্রমাণও পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এফবিআই তদন্তের তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে তারা দেখবে, যেসব সম্পদ তারা যুক্তরাষ্ট্রে কিনেছেন, সেই সম্পদগুলো বৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ থেকে কি না; বা কী উপায়ে তারা এই সম্পদের মালিক হয়েছেন। এমনকি তাদের আত্মীয়স্বজনও যখন এই সম্পদের মালিক হয়েছেন, তখন তাদের আর্থিক অবস্থা কী ছিল। দ্বিতীয়ত, যদি তারা দেখেন যে এটি বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ থেকে করেছেন, সেক্ষেত্রে এই তদন্ত সেখানেই শেষ হবে। কিন্তু যদি দেখা যায় যে, অবৈধ পন্থায় বা বিদেশ থেকে অর্থ এনে এটা করা হয়েছে, তাহলে সেক্ষেত্রে এই সম্পদগুলো জব্দ করা হবে। সূত্রগুলো বলছে, এর আগেও মেক্সিকো, নাইজেরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক ব্যক্তির অবৈধ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র সরকার জব্দ করেছিল।