২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৩:৩৮:৩০ পূর্বাহ্ন


সারা দেশে ১৪৪ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৩
সারা দেশে ১৪৪ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা সংগৃহিত ছবি


রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরকার নির্ধারিত দামে পাঁচ পণ্যের বিক্রি কার্যকরে গতকাল শনিবার অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে দেশের ১৪৪টি প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে সরকারি এই তদারকি সংস্থা।

এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সারা দেশে ভোক্তা অধিদপ্তরের ৫১টি টিম ৭৪টি বাজারে অভিযান পরিচালনা করে।’

দেশের বাজারে নিত্যপণ্য ডিম, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল ও চিনিতে সরকার নির্ধারিত দাম গত তিন দিনেও কার্যকর হয়নি।

নিত্যপণ্যের বাজারনিয়ন্ত্রণে গত বৃহস্পতিবার এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে নতুন দাম কার্যকর হবে। কিন্তু ওই পাঁচ পণ্য আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

 

 

রাজধানীতে অভিযান

গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল কাঁচাবাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তাহমিনা বেগম এবং ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান।

 

এ সময় জরিমানার ভয়ে দোকান খোলা রেখেই পালিয়ে যান দুই কাঁচা পণ্যের ব্যবসায়ী। ডিমের দাম বেশি রাখায়, ক্রয় রসিদ না থাকায় এবং মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় টাউন হল কাঁচাবাজার ও নিউ মার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজারের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার।

অভিযান শেষে মাগফুর রহমান বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে অধিদপ্তর এই অভিযান পরিচালনা করছে।

সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে পণ্য বিক্রি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’

 

 

ঢাকার বাইরে অভিযান

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ শহরের চাষিবাজারে অভিযান পরিচালনা করে তিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল সকালে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা এই অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি জানান, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করায়, ক্রেতাদের রসিদ না দেওয়ায় এবং মূল্যতালিকা হালনাগাদ না করায় তিনটি আলুর আড়তকে ওই অর্থ জরিমানা করা হয়।

দিনাজপুর : গতকাল দিনাজপুরের বাহাদুরবাজারের কাঁচাবাজারে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দোকানে অভিযান চালানো হয়।

এ সময় কয়েকটি দোকানে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও মুড়ির মূল্যতালিকা না থাকায় মোট ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে ডিমের দামে হেরফের পাওয়া যায়নি।

 

জরিমানা  করা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বাহাদুরবাজারের পলাশ আড়ত চার হাজার টাকা, জাকির ট্রেডার্স এক হাজার টাকা, সাগর ট্রেডার্স দুই হাজার টাকা এবং গাজী ট্রেডার্স দুই হাজার টাকা।

ফরিদপুর : ফরিদপুরে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখের নেতৃত্বে গতকাল হিমাগার, হে?লি?পোর্ট ও হাজী শরীয়তউল্লাহ বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম বিক্রি নিশ্চিতে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দাম বেশি নেওয়া, কেনার ভাউচার মূল্য ও তালিকা হালনাগাদ না থাকায় মেসার্স দিশারী ট্রেডার্স, মেসার্স হাওলাদার ট্রেডার্স এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদনের দায়ে ঘোষের হোটেলসহ মোট তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

 

পাঁচ পণ্যের বাজার পরিস্থিতি

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার খুচরা বাজারে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করলেও পাইকারি বাজারে তা করেনি। এতে পাইকারিতে দাম কমেনি। বেশি দামে পণ্য কেনা থাকায় খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারছেন না।

ভোক্তারা বলছে, পণ্যের দাম বাস্তবায়নে সরকারকে বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

গতকাল কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদকরা রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখেছেন, খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ কেজি ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। আলু প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। প্রতিটি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ১২ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে ১২.৩৩ থেকে ১২.৫০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সয়াবিন তেল (বোতলজাত) প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ১৭৪ থেকে ১৭৯ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

গতকাল মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ডায়মন্ড জাতের আলু কেজি ৫০ টাকা এবং ডিমের ডজন ১৫০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৪-১৫ টাকা বাড়তি দামে আলু বিক্রি করা হচ্ছে এবং ডজনপ্রতি ছয় টাকা বেশি দাম রাখা হচ্ছে ডিমে।

সরকার নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি না করার বিষয়ে মো. ইব্রাহিম নামের একজন বিক্রেতা বলেন, ‘সরকার খুচরায় আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম যে হারে নির্ধারণ করেছে, সেই দরে আমরা পাইকারিতেও পাচ্ছি না। এ কারণে ওই দামে বিক্রি করতে পারছি না।’

জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকা এবং ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১৫০ টাকা। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৪ টাকা এবং খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারে পাঁচ-ছয়টি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় দেশি পেঁয়াজ মানভেদে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আলু প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, ডিমের ডজন ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা এবং সয়াবিন তেল এক লিটারের বোতল ১৭৪ টাকা।

কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, খুচরায় দাম নির্ধারণের আগে পাইকারি বাজারে দাম নির্ধারণ করাটা জরুরি। কারণ পাইকারিতে বেশি দামে কিনে কেউ খুচরায় কম দামে বিক্রি করবে না। গতকালও পাইকারিতে আলু ৩৯ টাকা এবং পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে।

ডিম বিক্রেতারা বলছেন, ‘সব খরচ মিলিয়ে এখন প্রতিটি ডিম কেনায় খরচ পড়ছে ১২ টাকা ৫ পয়সার মতো। তাহলে কিভাবে আমরা ১২ টাকায় বিক্রি করব? আমরা তো সরকার নির্ধারিত দরে কিনতেই পারছি না, তাহলে বেঁচব কিভাবে!’

বাড্ডার কাঁচাবাজারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইমন হোসাইন বলেন, ‘সরকার বেশ কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে সেই সুফল পাচ্ছি না। পেঁয়াজ, আলু ও চিনি আজও (গতকাল) আগের দামেই কিনতে হয়েছে। পণ্যের দাম বাস্তবায়নে সরকারকে মনিটরিং বাড়াতে হবে। কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

হিলি (দিনাজপুর) : সরকার নির্ধারিত দামে দিনাজপুরের হিলিতে দেশি পেঁয়াজ ও আলু মিলছে না। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাটিনাল জাতের বড় আলু প্রতি কেজি ৪০ টাকা, গুটি আলু ৫০ টাকা, ভর্তার আলু ৬০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ টাকা। তবে ডিম সরকারের বেঁধে দেওয়া ১২ টাকা পিস হিসাবেই বিক্রি করা হচ্ছে।

হিলি বাজারে পণ্য কিনতে আসা আলতাব হোসেন বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে কি না, সেটি তদারকের কোনো ব্যবস্থা নেই।

আলু বিক্রেতা ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘সরকার দাম বেঁধে দিলেও আমরা সেই দামে আলু কিনতে পারছি না। তাহলে নির্ধারিত দামে বিক্রি করব কিভাবে?

পেঁয়াজ বিক্রেতা সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘৭৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনে বিক্রি করছি ৮০ টাকায়।’

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় খুচরায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি করা হচ্ছে ৪৪ টাকা দরে। পাইকারি আড়তগুলোতে পাঁচ কেজি আলু ২১০ টাকা। চুয়াডাঙ্গার বাজারে গতকাল খুচরায় প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১২ টাকায়। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩০ টাকা।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলেন, নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে কেনায় এসব পণ্য বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।