২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০২:৩৮:০১ পূর্বাহ্ন


মরক্কোয় ভূমিকম্প: একটি স্কুলের কোনও শিক্ষার্থীই বেঁচে নেই
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৯-২০২৩
মরক্কোয় ভূমিকম্প: একটি স্কুলের কোনও শিক্ষার্থীই বেঁচে নেই ছবি: সংগৃহীত


সম্প্রতি ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে উত্তর আফ্রিকার দেশ মরোক্কোতে। ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৩ হাজারে। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে আড়াই হাজার। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাকেশের দক্ষিণের এলাকাগুলো। ওই এলাকার পাহাড়ি গ্রামগুলো একের পর এক মাটিতে মিশে গেছে; আদাসেল গ্রামও সেগুলোর একটি।

গ্রামটির অবস্থান ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি। জানা গেছে, মরোক্কোর আদাসেল গ্রামের আরবি এবং ফরাসিভাষার শিক্ষিকা নেসরিন আবু এলফাদেল নামে একজন শিক্ষিকা ভূমিকম্পের পর নিজের ৩২ জন ছাত্র-ছাত্রীর খোঁজে বেরিয়ে ছিলেন। খোঁজ নেয়ার পর তিনি ভয়াবহ এক সত্য জানতে পারেন। তার ৩২ জন ছাত্র- ছাত্রীর কেউ আর বেঁচে নেই। ভূমিকম্পে মরোক্কো যখন বিধ্বস্ত হয় সে সময় তিনি মারাকেশ শহরে ছিলেন।

শিক্ষিকা নেসরিন আবু এলফাদেল বলেন, আমি গ্রামে গিয়ে আমার বাচ্চাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম। সোমায়া কোথায়? ইউসুফ কোথায়? এই মেয়েটা কোথায়? ওই ছেলেটা কোথায়? কয়েক ঘন্টা পরে উত্তর এল, ওরা সবাই মারা গেছে।তিনি বিবিসিকে বলেন, আমি চিন্তা করছিলাম ক্লাসের উপস্থিতির খাতাটা হাতে ধরে রেখেছি এবং একের পর এক শিক্ষার্থীর নাম কেটে দিচ্ছি।

নাম কেটেই যাচ্ছি যতক্ষণ না আমি ৩২ জনের নাম কেটে ফেলছি। তারা সবাই এখন মৃত। মরোক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত প্রায় ৩ হাজারের মধ্যে এই ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো ছিল মারাকেশের দক্ষিণে। যেখানে অনেক পাহাড়ি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আদাসেল সেই জায়গাগুলোর মধ্যে একটি ছিল।

শিক্ষিকা এলফাদেল জানান, কীভাবে ছয় বছর বয়সী খাদিজাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। উদ্ধারকারীরা শিশুটির মৃতদেহ তার ভাই মোহাম্মদ এবং তার দুই বোন মেনা ও হানানের পাশে পড়ে থাকতে দেখেন। ভূমিকম্পের সময় তারা সবাই তাদের বিছানায় ছিল। সম্ভবত তারা ঘুমিয়ে ছিল। নিহত শিশুরা সবাই এলফাদেলের শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, খাদিজা আমার প্রিয় ছিল। সে খুব সুন্দর, স্মার্ট এবং গান গাইতে পছন্দ করত। সে আমার বাড়িতে আসত। তার সঙ্গে পড়াশোনা করতে এবং কথা বলতে পছন্দ করতাম। মর্মাহত শিক্ষিকা তাদের ফেরেশতা এবং সম্মানিত শিশু হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যারা শিখতে খুব পছন্দ করত। দারিদ্র্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয়বহুল সংকটের সঙ্গে লড়াই করা সত্ত্বেও তারা এবং তাদের পরিবার স্কুলে যাওয়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বলে মনে করত।

তিনি আরো বলেন, আমাদের শেষ ক্লাস ছিল শুক্রবার রাতে। ভূমিকম্পের ঠিক পাঁচ ঘন্টা আগে। আমরা মরোক্কোর জাতীয় সঙ্গীত শিখছিলাম এবং সোমবার সকালে পুরো স্কুলের সামনে এটি গাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম।