২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৪:২৪:৩১ পূর্বাহ্ন


সীমানা বাড়ছে রাজউকের
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৯-২০২৩
সীমানা বাড়ছে রাজউকের সংগৃহিত ছবি


রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সীমানা বাড়ছে। ঢাকার পূর্বপাশে মেঘনা ব্রিজ, দক্ষিণ পাশে দ্বিতীয় শীতলক্ষ্যা ও দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় পদ্মা ব্রিজের এপাড় পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে রাজউকের সীমানা। তবে সংস্থাটির আওতায় থাকা ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৫৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে। বাকি ৯৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার সঙ্গে সোনারগাঁও, শ্রীনগরসহ প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংযুক্ত করা হবে। এরই মধ্যে চলছে সমীক্ষা কার্যক্রম। শিগগির সমীক্ষা কার্যক্রম শেষ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজউকের আওতাধীন সাভার, কেরানীগঞ্জ, দক্ষিণগাঁও, উত্তরখান, দক্ষিণখান, তুরাগসহ বিভিন্ন এলাকায় রাজউক এখনো নজর দেয়নি। এ অবস্থায় আয়তন বাড়ানো হলে সেখানেও তারা সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারবে না। সংস্কার করে রাজউকের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে বিদ্যমান ও নতুন এলাকায় কার্যকারিতা দেখানো সম্ভব হবে। রাজউকের সীমানা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

চলতি বছরের শুরু থেকে রাজউকের আয়তন বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে বিষয়টি স্পষ্ট হয় জুনে। গত ২০ জুন জাতীয় সংসদে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ জানান, ঢাকার পুবে মেঘনা নদী ও পশ্চিমে (বাস্তবে দক্ষিণ-পশ্চিমে) পদ্মা সেতু পর্যন্ত রাজউকের সীমানা বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকারের অনুশাসন পেলে রাজউক এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। রাজউক বর্তমানে ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত। এখানে প্রশাসনিক অঞ্চল রয়েছে আটটি।

 

এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুর। সম্প্রতি গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (গাউক) চেয়ারম্যান নিয়োগ করে ওই প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করেছে সরকার। গাজীপুরের ৫৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ছেড়ে দিয়েছে রাজউক। এখন রাজউকের আওতায় রয়েছে ৯৩৮ বর্গকিলোমিটার। এমন এক বাস্তবতায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) তাদের অধিক্ষেত্র এলাকা মাওয়া পদ্মা সেতুর এপাড় এবং মেঘনা নদী ও দ্বিতীয় শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃত করতে চায়। যেহেতু রাজউক থেকে ৫৯০ বর্গকিলোমিটার গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে চলে গেছে। তাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের অধিক্ষেত্র এলাকা পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নিয়েছে। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগের পর থেকে রাজউক এ কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছে। রাজউক এলাকা সংযোজন করলে হবে না, তাকে সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে জানালেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান।

তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজউক তাদের অধিক্ষেত্র এলাকায় উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। তবে পদ্মা সেতু পর্যন্ত যেভাবে আবাসন গড়ে উঠছে, সেখানে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো সংস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু সেটি রাজউক করবে, নাকি অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে করাবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাজউকের অধিক্ষেত্র বাড়ানোর চেয়ে তাদের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। কোথায় কীভাবে ভবন হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না রাজউক। বরং সাভারের মতো এলাকায় যেখানে পৌরসভা রয়েছে। সেসব জায়গার উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পৌরসভা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগগুলোকে (ইউপি, পৌরসভা) কার্যকর করলে রাজউকের সীমানা বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।

এ বিষয়ে ড্যাপের পরিচালক ও রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর আলাদা কর্তৃপক্ষ হওয়ায় রাজউকের একটা বিরাট অংশ চলে গেছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতু হওয়ায় এ এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য একটা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। সেখানে রাজউক যদি তার অধিক্ষেত্র বিস্তৃত করে পদ্মা সেতু পর্যন্ত নিতে পারে, তাহলে এসব এলাকা পরিকল্পিতিভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। তাই রাজউকের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। সে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকার যদি সম্মতি দেয়, তাহলে রাজউকের অধিক্ষেত্র পুনর্বিন্যাস হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালে প্রণীত দি টাউন ইম্প্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫৩ আইনের আওতায় ১৯৫৬ সালে ঢাকা এবং এর পার্শ¦বর্তী এলাকাগুলোর উন্নয়ন ও পরিবর্ধনের বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে সর্বপ্রথম ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিআইটি ১৯৮৭ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক হিসেবে পরিবর্তিত হয়। ১৯৮৭ সালে রাজউকের অধিক্ষেত্র সাভার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও অন্যান্য এলাকায় বিস্তৃত হয়।