ভয়াবহ ঝড় ও বন্যায় তছনছ লিবিয়া। যেদিকেই চোখ যাচ্ছে শুধুই লাশের স্তূপ চোখে পড়ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। নিখোঁজ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এদিকে বিধ্বংসী ঝড় 'ড্যানিয়েল' এবং তার জেরে লাগাতার বৃষ্টির কারণে ভয়াবহ বন্যায় ডারনা শহরের প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
ডারনা শহরের আবহাওয়ায় এখন শুধুই হাহাকার আর স্বজনহারাদের কান্না। তবে, মৃত ও নিখোঁজের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বেসরকারি সূত্রের তরফে দাবি করা হচ্ছে। লিবিয়ার প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ডারনা শহরে বন্যার কর্দমাক্ত স্রোতে বাড়ির পাশাপাশি ভেসে গেছে প্রচুর যানবাহনও। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাও। অন্যদিকে, যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার জেরে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। ইতিমধ্যে গ্রিসের একাধিক শহরে মানচিত্র বদলে গিয়েছে বলে খবর। চেনা, সাজানো শহরগুলির অবস্থা দেখে চেনাই দায় হয়ে পড়ছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রিস (Greece) উপকূলে ভূমধ্যসাগরের উপর তৈরি হয় ঝড় 'ড্যানিয়েল'। যার জেরেই রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয় গ্রিসে। পরে তা লিবিয়ায় আছড়ে পড়ে। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় একাটানা ভারী বৃষ্টি। ড্যানিয়েলের জেরে লিবিয়ার বিভিন্ন অংশে ১৫০ থেকে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে খবর। যার জেরে একদিকে যেমন হড়পা বানের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনই ঝড়ের তাণ্ডবে গ্রিসের একাধিক শহর লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে বলে খবর। এদিকে জলের স্রোত বর্তমানে ১০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উঠেছিল বলে খবর। বিধ্বংসী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লিবিয়ার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ। উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য তুর্কির তরফে পাঠানো হয়েছে বিশেষ উদ্ধারকারী দল। উদ্ধারের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইতালিও। সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে মার্কিন প্রশাসনও। এদিকে সংবাদ সংস্থা বিবিসি একটি উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, বন্যার আগের ভূমধ্যসাগরের গাঢ় নীল জল রবিবারের পর রং বদলে হয়েছে ঘোলাটে সবুজ। শহরের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া ওয়াদি ডারনা নদী দিয়েই সুনামির মতো জলস্রোত বয়ে গিয়ে মিশেছিল সাগরে। সেই নদীর দু'পাশে ছিল ঘন জনবসতি। সে সব স্রেফ ধুয়েমুছে গিয়েছে।
তবে পূর্ব লিবিয়ার এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিধ্বংসী বন্যায় ডারনা শহর জুড়ে পড়ে আছে মৃতদেহ। পচা-গলা দেহ থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। তিনি বলেন, যেদিকে চোখ রাখা যায় শুধু মৃতদেহের সারি। শহরের বহু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন পূর্ব লিবিয়ার ওই মন্ত্রী। পাশাপাশি ইতিমধ্যে জলের তোড়ে ধুয়ে গিয়েছে একাধিক বাড়ি। ভাঙা বাড়ির মাথায় গাড়ি উঠে যাওয়ার ছবিও সামনে এসেছে।