২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৮:৪১:১৩ পূর্বাহ্ন


অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা বন্ধে নীতিমালার উদ্যোগ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৮-২০২৩
অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা বন্ধে নীতিমালার উদ্যোগ সংগৃহিত ছবি


এমএলএম, ই-কমার্সের পর অবৈধ অনলাইন ফরেক্স ট্রেডিংয়ের ফাঁদে পড়ে কোটি কোটি টাকা খুইয়েছে মানুষ। অর্থের বেশির ভাগ হুন্ডির আড়ালে এরই মধ্যে পাচার হয়ে গেছে। আদৌ এ টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা বন্ধে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে একটি সভা ডেকেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এতে অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা ঠেকাতে আইন বা নীতিমালা করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে আজকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এতে অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা এবং যাচাইবিহীন আর্থিক লেনদেন বন্ধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হবে।

 

বৈঠকসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় নীতিমালা আইনের আলোকে ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রার বেচাকেনা করা অবৈধ। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএফআইইউ বিভিন্ন সময়ে সতর্ক করেছে। এরপরও অনলাইন ফরেক্স ট্রেডিং অনেক বড় হয়েছে। তবে অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা ঠেকানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। আজকের বৈঠক থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, এর আগে নীতিমালা ছাড়াই ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার হয়েছে। ই-কমার্সে অনেক মানুষ প্রতারিত হওয়ার পর একটি নীতিমালা হয়। যদিও আত্মসাৎ করা অর্থ আদৌ ফেরত মিলবে কিনা, তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি বিনিয়োগে উচ্চ লাভের টোপ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই) নামের অ্যাপভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। দুবাই বসে সংগ্রহ করা অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে এরই মধ্যে পাচার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মেটাভার্স ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্রিপ্টোকারেন্সি অথবা জুয়ার আড়ালে অর্থ সংগ্রহ করছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিএফআইইউ এখন পর্যন্ত অনলাইনে অননুমোদিত আর্থিক লেনদেনের ৬৬৮টি ওয়েবসাইট চিহ্নিত করে ব্লক করার ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ১৪৮টি অ্যাপ, ৪০১টি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ চিহ্নিত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে এসব বিষয়ে সিআইডিকে ১৩৬টি গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিয়েছে বিএফআইইউ। সর্বশেষ গত ১০ আগস্ট পুলিশের বিভিন্ন শাখা ও বিটিআরসির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সংস্থাটি। এর মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠান কীভাবে এত টাকা নিয়ে পালিয়েছে তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এ ছাড়া ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, টেলিভিশনে অবৈধ ফরেক্স ট্রেডিংয়ের বিজ্ঞাপন বন্ধের জন্য অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড সংখ্যক প্রবাসী দেশের বাইরে গেছেন। সে বিবেবচনায় রেমিট্যান্স বাড়ার কথা। অথচ গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে সামান্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত যে রেমিট্যান্স এসেছে, আগের একই সময়ের তুলনায় কম। যে কারণে ডলার সংকট যেন কাটছেই না। রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রির ফলে এরই মধ্যে রিজার্ভ কমে ২৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে যেখানে রিজার্ভ উঠেছিল রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল্যস্ফীতি অনেক বাড়লেও ব্যাংক, বীমা, আর্থিক বা শেয়ারবাজারের মতো আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে সেভাবে মুনাফা বাড়েনি। গত জুনে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশ। অথচ ব্যাংক খাতে আমানতের গড় সুদহার ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ অবস্থায় গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের আমানত বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সাম্প্রতিক কোনো বছরে এত কম প্রবৃদ্ধি হয়নি। ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমলে সাধারণভাবে সবসময় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ে। তবে গত অর্থবছর সঞ্চয়পত্রের যে বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেশি ভাঙিয়েছে মানুষ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে বেশি লাভের আশায় কেউ কেউ পঞ্জি স্কিমের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করছে।