২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৮:২৪:০৫ পূর্বাহ্ন


ইন্টারনেট থেকে তারেকের বক্তব্য সরানোর আদেশ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৮-২০২৩
ইন্টারনেট থেকে তারেকের বক্তব্য সরানোর আদেশ সংগৃহিত ছবি


ইউটিউব ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য অপসারণের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) অবিলম্বে এ আদেশ পালন করতে হবে।

 

আট বছর আগের রিটের সম্পূরক আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার সকালে এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ সময় রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম, সানজিদা খানম ও রিটকারী আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

আদেশের পর বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এ নিয়ে আপত্তি তুললে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিচারকক্ষ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে হইচই, তর্ক ও তুমুল বিত-া হয়। একপর্যায়ে এজলাস ছেড়ে যান বিচারকরা। এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর দুপুর আড়াইটায় এজলাসে ফিরে নিয়মিত বিচারকাজ শুরু করেন দুই বিচারক।

রিটের সম্পূরক আবেদনে আদেশের পর সকাল পৌনে ১১টায় বিএনপিপন্থি আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির কাছে এ সংক্রান্ত রিট বদলির জন্য গত রবিবার আবেদন দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আদেশ দেওয়া সমীচীন নয়। আবেদনটি (সম্পূরক) নথিভুক্ত রাখেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিটিআরসির আইনজীবী কথা বলছেন, এসব কী হচ্ছে?’

এর মধ্যেই সম্পূরক আবেদনে হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তখন আদালত তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আর বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতকে উদ্দেশ করে একেক জন একেক কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক কথা বলতে চাইলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরোধিতার মুখে পড়েন। এ সময় বিচারকক্ষে থাকা আইন কর্মকর্তাদের বলতে শোনা যায়, এটি কোর্ট, এটা চিৎকার-চেঁচামেচি করার জায়গা না। তখন বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী ঔদ্ধত্য দেখালে হট্টগোল আরও বেড়ে যায়।

এর মধ্যেই আদালত বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আদেশ হয়েছে। সংক্ষুব্ধ হলে আপনারা আপিল বিভাগে যেতে পারেন। এ সময় বিচারপতিকে উদ্দেশ্যে করে বিএনপিপন্থি একাধিক আইনজীবী বলেন, আপনার বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে অনাস্থা জানানো হয়েছে। আপনার প্রতি আইনজীবীদের আস্থা নেই। আপনি বায়াসড। আপনার কাছ থেকে আমরা ন্যায় বিচার আশা করি না। আপনার কোর্টে তারেক রহমানের কোনো মামলা চলতে পারে না।

তখন রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইন কর্মকর্তা বিচারপতিদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে চাইলে তাকে ধমক দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। আইন কর্মকর্তা তাদের পাত্তা না দিয়ে আদালতকে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনুরোধ করলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাকে থামাতে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তারা চিৎকার করে আদালতকে রিটটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিতে এবং আদেশ প্রত্যাহার করার দাবি তোলেন।

বিএনপিপন্থি জ্যেষ্ঠ এক আইনজীবী আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি বিচার বিভাগে অরাজকতা তৈরি করছেন। তার এ মন্তব্যে রিটকারী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি জানালে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের কয়েকজন ‘শেইম’ ‘শেইম’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এমন হট্টগোলের একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন দুই বিচারপতি। বিচারকক্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় বিএনপিপন্থি এক আইনজীবীকে বিচারপতির দিকে মামলার কাগজপত্র ছুড়ে মারতে দেখা যায়।

২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পরদিন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আইনের দৃষ্টিতে পলাতক অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সম্প্রতি রিটকারী পক্ষ রুল শুনানির উদ্যোগ নিলে চলতি মাসের শুরুতে বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। বিদেশে থাকায় তারেক রহমানকে পাঠানো নোটিশ জারি না হয়ে ২ আগস্ট তা ফেরত আসে বলে জানায় রিটকারী পক্ষ। পরে গত ১০ আগস্ট শুনানিতে বলা হয়, তারেক রহমানের যে ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হয়েছিল, সেটি ঠিক নয়। তখন আদালত রিট আবেদনকারী পক্ষকে ঠিকানা সংশোধনের জন্য আবেদন করতে বলেন। সেদিনই হলফনামা করে তারেক রহমানের ঠিকানা সংশোধন এবং নতুন করে নোটিশ জারির আবেদন করেন।

এরপর গত ১৩ আগস্ট হাইকোর্ট তারেক রহমানের সংশোধিত ঠিকানায় নোটিশ জারির নির্দেশ দেন। এরপর তারেক রহমানের বক্তব্য, বিবৃতি ও ভাষণ ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণে সম্পূরক আবেদন করেন রিট আবেদনকারী।

আদেশ প্রত্যাখ্যান বিএনপির

অনলাইন থেকে তারেক রহমানের বক্তব্য সরাতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন, বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমি দলের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দুজন বিচারপতির আদেশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ রায় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা পূরণের রায়Ñ এটি আওয়ামী চেতনার রায়। আমরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস, ড. ওবায়দুল ইসলাম, রকিবুল ইসলাম বকুল, মুনীর হোসেন ও আকরামুল হাসান মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘একপক্ষের বক্তব্য না শুনেই ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধানের বিরুদ্ধে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই আদেশ রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে হরণ করেছে।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির কাছে অন্য আদালতে এই রিটটি বদলির জন্য আবেদন করা হলেও সেটিকে গ্রাহ্য না করে আদালতের আদেশ দেওয়া মানে সম্পূর্ণরূপে ন্যায়বিচারকে পদদলিত করা। আদালতের এ ধরনের আদেশের নামে প্রহসন করা হয়েছে। এই আদেশের কারণে শেখ হাসিনার আমলে বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আর বিন্দুমাত্র আস্থা রইল না।’

রিজভী বলেন, ‘এ ধরনের আদেশ ফ্যাসিজমের নগ্ন বহির্প্রকাশ। যে দেশে আইনের শাসন নেই, যে দেশে ফ্যাসিবাদ সর্বত্র পরিব্যাপ্ত, সেসব দেশ ছাড়া আদালতের এহেন বিবেকহীন পক্ষপাতমূলক রায় প্রদান নজিরবিহীন। এহেন অবিচারের আদালত শেখ হাসিনার বদৌলতেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। যে কারণে আমরা উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের মুখ থেকে শুনতে পেয়েছিÑ তারা নাকি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। আজকের আদেশেও সেটি নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে।’