তিনটি আমলের সওয়াব অপরিসীম; বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে এই আমলগুলোর জন্য অপরিমিত সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
১. ক্ষমা: ক্ষমা আল্লাহর প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজ। আল্লাহ নিজে ক্ষমাশীল; ক্ষমার মহত্ব তিনি বান্দাদের মধ্যেও দেখতে চান। আল্লাহ বলেন,
وَ جَزٰٓؤُا سَیِّئَۃٍ سَیِّئَۃٌ مِّثۡلُهَا فَمَنۡ عَفَا وَ اَصۡلَحَ فَاَجۡرُهٗ عَلَی اللّٰهِ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیۡنَ
আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই; তবে যে ক্ষমা করে ও আপস করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা শুরা: ৪০)
অর্থাৎ কেউ যদি কারও প্রতি অন্যায় করে, তার অধিকার আছে বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে তাকে অন্যায়ের সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়ার, কিন্তু যে ক্ষমা করে দেবে, তার প্রতিদান আল্লাহ দেবেন। আর কোনো অবস্থাতেই বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।
২. ধৈর্য: বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর ওপর ভরসা করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ধৈর্যশীলদের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। ধৈর্যশীলদের অপরিসীম সওয়াব দানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আল্লাহ বলেন,
قُلۡ یٰعِبَادِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا فِیۡ ہٰذِہِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃٌ وَاَرۡضُ اللّٰہِ وَاسِعَۃٌ اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ اَجۡرَہُمۡ بِغَیۡرِ حِسَابٍ
বল, ‘হে আমার মু’মিন বান্দাগণ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। যারা এই দুনিয়াতে কল্যাণকর কাজ করে, তাদের জন্যে আছে কল্যাণ। আর আল্লাহর জমিন প্রশস্ত, ধৈর্যশীলদের তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে। (সূরা যুমার: ১০)
অর্থাৎ পৃথিবীতে বান্দাদের কৃত সব কাজের অনুরূপ প্রতিদান দেওয়া হবে আর ধৈর্যশীলদের দেওয়া হবে অপরিমিত পুরস্কার।
৩. রোজা: রোজা ফজিলতপূর্ণ আমল। শুধু ফরজ রোজা অর্থাৎ রমজানের রোজাই নয়, নফল রোজার ফজিলতও অনেক। ফরজ রোজা তো অবশ্যই রাখতে হবে, পাশাপাশি আমাদের বেশি বেশি নফল রোজা রাখার চেষ্টা করা উচিত। রোজার অপরিসীম সওয়াবের কথা বর্ণনা করে নবিজি সা. বলেন,
قَالَ اللَّهُ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ، فَإِنَّهُ لِي، وَأَنَا أَجْزِي بِهِ. وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ، وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ، فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ. وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ، لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, রোজা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু রোজা আমার জন্য, তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার। যার কবজায় মুহাম্মদের প্রাণ, তাঁর শপথ! রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্র নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধিপূর্ণ। রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি আনন্দের মুহূর্ত। যখন সে ইফতার করে, সে আনন্দিত হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে সে আনন্দিত হবে। (সহিহ বুখারি: ১৯০৪)
আসুন আল্লাহর প্রিয় এ তিনটি কাজ বেশি বেশি করি। মানুষের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করি, কেউ অন্যায় করলে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমা করি ও সমঝোতা করে নেই, বিপদে-আপদে আল্লাহর ওপর ভরসা করি ও ধৈর্য ধারণ করি এবং সুযোগ পেলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সওয়াবের নিয়তে রোজা রাখি। রমজানের সবগুলো রোজা রাখার পাশাপাশি প্রতি মাসে অন্তত তিনটি নফল রোজা রাখি।