২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০২:৩৮:২০ অপরাহ্ন


সেপ্টেম্বরে আসছে ভোলার গ্যাস
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৩
সেপ্টেম্বরে আসছে ভোলার গ্যাস


সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসে (সিএনজি) রূপান্তর করে তা আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তিতাসের বিতরণ এলাকার শিল্প-কারখানায় এই গ্যাস সরবরাহ করবে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেড।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্ট্রাকো কম্পানি ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনতে চলতি বছরের মে মাসে সুন্দরবন গ্যাস কম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে।

চুক্তি সূত্রে জানা গেছে, ইন্ট্রাকো সরকারের কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১৭ টাকায় কিনে তা ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করবে।

 

তথ্য অনুসারে, প্রথম ধাপে চার-পাঁচ মাসের মধ্যে দৈনিক পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রূপান্তর করে তা ঢাকায় সরবরাহ করা হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এক বছরের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। মূলত সংকুচিত করার ফলে গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত করে জমা করা হয়।

এ প্রক্রিয়ায় গ্যাসকে তরলীকরণ করে তা  পরিবহন করা হবে।

 

জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভোলা থেকে উত্তোলন করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহন করে শিল্প-কারখানায় সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে এটি হবে দেশে প্রথমবারের মতো কোনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরাসরি সিএনজি করে গ্যাস নিয়ে যাওয়া।

সিএনজি আকারে এই গ্যাস এনে শিল্পে দেওয়া গেলে তা শিল্প খাতে বড় ভূমিকা রাখবে।

 

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইন্ট্রাকো কম্পানি ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনতে কাজ করছে। আগামী সেপ্টম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনার কাজ শুরু হবে।’

ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেডের কম্পানি সচিব সালাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরকে টার্গেট রেখেই দিন-রাতে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই ভোলার গ্যাস সিএনজি করে নিয়ে সরবরাহ করা যাবে।

 

শিল্প-কারখানায় বর্তমানে পাইপলাইন থেকে প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) গ্যাস পায় ৩০ টাকায়। সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস বিক্রি হয় ৪৩ টাকায়। প্রস্তাব অনুসারে, ভোলার গ্যাস সিলিন্ডারে করে কারখানায় পৌঁছে দেওয়া হবে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে নিয়ে আসতে এবং শিল্প এলাকায় সরবরাহ করতে অত্যধিক খরচ হবে, সেটি নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে।

তবে শিল্প বাঁচাতে ব্যবসায়ীরা গ্যাসের মূল্য বেশি পরিশোধে আগ্রহী হওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখছে জ্বালানি বিভাগ। সে ক্ষেত্রে খরচের বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়ার চেয়ে কত দ্রুত এই গ্যাস নিয়ে আসা যায় সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে পেট্রোবাংলা।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ভোলায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব। কিন্তু সঞ্চালন লাইন না থাকায় তা জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছে না। তাই বিকল্প উপায়ে গ্যাস শিল্পে দেওয়া হবে।’

ভোলায় গ্যাস উৎপাদনের কাজটি করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি (বাপেক্স)। বাপেক্সের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে তা সরবরাহ করে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কম্পানি। ১৯৯৫ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাপেক্স। একই সংস্থা ২০১৮ সালে আবিষ্কার করে ভোলার দ্বিতীয় গ্যাসক্ষেত্র ভোলা নর্থ। শাহবাজপুর থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয় ২০০৯ সালে। আর ভোলা নর্থ থেকে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি। দুটি গ্যাসক্ষেত্রে এখন দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পেট্রোবাংলা।

চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম ভোলার ইলিশা-১ কূপ খনন করে গ্যাস পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই কূপে ১৮০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে। নতুন কূপ খননের পর মজুদ আরো বাড়তে পারে। চাহিদা না থাকায় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে না।