সদ্য ফেলে আসা জুলাই মাসের মতো গরম অতীতে আর কোনও মাসে পড়েছিল বলে রেকর্ড বইয়ে অন্তত লেখা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থার পরে এ বার আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-ও জানিয়ে দিল এই কথা। সংস্থার প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, পৃথিবী ও জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।
আমেরিকান সরকারের বাণিজ্য দফতরের অধীনস্থ সংস্থা ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) একই সুরে স্মরণকালের উষ্ণতম জুলাইয়ের খবর নিশ্চিত করেছে। তারা জানাচ্ছে, গত ১৭৪ বছরের মধ্যে এটিই উষ্ণতম জুলাই। গত মাসে ভূ-পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে ১.১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও এই নিয়ে পরপর চার মাস রেকর্ড ছুঁয়েছে।
নাসার গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ় (জিআইএসএস)-এর বিজ্ঞানীদের একটি রিপোর্ট বলছে, ১৮৮০ সাল থেকে সংরক্ষিত তাপমাত্রার হিসাব ঘেঁটে দেখলে এই ২০২৩ সালের জুলাইটিই ছিল সর্বকালের উষ্ণতম মাস। কার্যত, অন্য সমস্ত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে ০.২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি গরম পড়েছিল। আর শুধু ১৯৫১ থেকে ১৯৮০ সালের সব জুলাইয়ের গড় তাপমাত্রা ধরলে তার চেয়ে ১.১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি গরম পড়েছিল এ বারের জুলাইয়ে। নাসার তথ্য অনুযায়ী, ১৮৮০ সাল থেকে দেখলে পাঁচটি উষ্ণতম জুলাই এসেছে শুধুমাত্র গত পাঁচ বছরেই।
নাসার প্রশাসক বিল নেলসনের কথায়, ‘‘সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যে অবস্থা অনুভব করেছেন, নাসার তথ্য তাকেই প্রতিষ্ঠিত করছে। ইতিহাসের উষ্ণতম মাস ছিল ২০২৩ সালের জুলাই।’’ এই সঙ্কট জলবায়ু নিয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিল। বলেছেন, ‘‘জনগোষ্ঠী এবং আমাদের গ্রহকে বাঁচাতে এখনই আমাদের পদক্ষেপ করা দরকার। এই তো আমাদের সম্বল।’’
বিশেষজ্ঞেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি যখন এই তথ্য প্রকাশ করছে, তখন একের পর এক দাবানলে পুড়ছে কানাডা থেকে হাওয়াই। এই মুহূর্তে বন্যা আর ধসে উত্তর ভারতের একাধিক জেলা বিধ্বস্ত। গরমে অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভুগেছে ভারতও। গত গ্রীষ্মেই তাপপ্রবাহ বয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে। কলকাতা শহর এমন শুকনো গরম খুব একটা দেখেনি। এ সব লক্ষণই উদ্বেগের। নাসার রিপোর্ট বলছে, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ, উত্তর আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, আন্টার্কটিকার মতো এলাকায় সম্প্রতি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি গরম বেড়েছিল। পূর্ব ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরে গত মে মাস থেকেই ‘এল নিনো’ বা গরম সমুদ্রস্রোতের প্রভাব দেখা গিয়েছে। সেই প্রভাব আগামী বছর সব চেয়ে বেশি হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন গডার্ড ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর গাভিন শ্মিট। তিনি বলেছেন, ‘‘১৮৮০ থেকে ধরলে আমাদের রেকর্ডে এই জুলাই মাসটাই সর্বকালের উষ্ণতম মাস। বিজ্ঞান স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে, এটা স্বাভাবিক নয়। মূলত মানুষেরই ছড়ানো গ্রিনহাউস গ্যাস গোটা দুনিয়ার মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই যে গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, ঘরে-বাইরে তারই বিপজ্জনক আঁচ পাচ্ছেন বিশ্ববাসী।’’