০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:০৩:৩০ পূর্বাহ্ন


পরিবহন সেবার আইকন হতে যাচ্ছে বিআরটিসি
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৮-২০২৩
পরিবহন সেবার আইকন হতে যাচ্ছে বিআরটিসি সংগৃহিত ছবি


দেশে একসময়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) সেবা ছিল ধীরগতির। তখন মানুষ বাধ্য না হলে বিআরটিসির সেবা নিতে চাই তো না। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু পুরনো সেই চিত্র আর নেই বললেই চলে। এখন রাস্তায় বের হলেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাসের সঙ্গে সঙ্গে বিআরটিসি বাসও দেখা যায়। বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ, পতেঙ্গায় পর্যটক বাস, ২০টি জায়গায় কারিগরি প্রশিক্ষণসহ দেশের ৬৩ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন যাত্রীসেবা দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন ও পণ্য পরিবহন সেবায় গতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। এ যেন পরিবহন সেবার আইকনিক হওয়ার পথে বিআরটিসি।

জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকার আটটি রুটে নারীদের জন্য বাস সেবা ও ই-টিকেটিং সেবা, ১৯১টি বাসে আনলিমিটেড ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধাসহ যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিআরটিসির ১ হাজার ৪০০-এর মতো বাসে সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। এ ছাড়া আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বিআরটিসিতে র‌্যাপিড পাস চালু ও ১২ শতাধিক বাসে ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম (ভিটিএস) স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে শিগগিরই নতুন আরও ১০০টি ডাবল ডেকার বাস আনতে যাচ্ছে বিআরটিসি। ৩৮৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে এজন্য। ইলেকট্রিক এসব বাসে থাকবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ সুবিধা। সাতটি বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হবে বাসগুলোর জন্য। আর এ পদক্ষেপের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোর নতুন যুগে প্রবেশ করবে বিআরটিসি।

সরেজমিনে রাজধানীর বাবুবাজার, গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে বিআরটিসি বাসের সেবা নিতে দেখা যায় যাত্রীদের। পুরনো বাসগুলোকেও মেরামতের মাধ্যমে চলাচলের উপযোগী করে রাস্তায় চালানো হচ্ছে। অনেক জায়গার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়।

গুলিস্তানে মো. নাঈম নামে এক যাত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিআরটিসি বাসের জন্য এখন আগের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। আগের থেকে সহজেই পাওয়া যায় এই বাস। আর বিআরটিসির বাসে বসে স্বস্তিও পাওয়া যায়। যা অন্য বাসগুলোতে পাওয়া যায় না। তাই সবসময় বিআরটিসির বাসে চলার চেষ্টা করি।’

শাহবাগে আরেক যাত্রী মো. ইমন বলেন, ‘বিআরটিসির লাল বাসগুলো আমাদের একটি আবেগের জায়গা। আমাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে এ বাসগুলোতে চড়ে। এ বাসগুলোকে অনেক মিস করি। এখন রাস্তায় এ বাসগুলোতে চড়লে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে।’ সরকারের এ বাসগুলোর সেবা আগামীতেও যেন একইরকম থাকে সে প্রত্যাশা এই যাত্রীর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত আড়াই বছরে বিআরটিসির যেসব অর্জন তার মধ্যে অন্যতম হলো বর্তমানে প্রধান কার্যালয়সহ ডিপো ও ইউনিটগুলোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা নিজস্ব আয় থেকে প্রতি মাসের ১ তারিখে পরিশোধ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে তিন মাস পরপর গ্র্যাচুইটি, সিপিএফ ও ছুটি নগদায়নের টাকা অনলাইনে পরিশোধ করা হচ্ছে। গত দুই বছরে সিপি ফান্ড, গ্র্যাচুইটি এবং ছুটি নগদায়ন বাবদ ১ হাজার ১৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৩৭ কোটি ৫৮ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৪ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান যোগদানের পূর্ববর্তী সময়ের বকেয়া বেতন বাবদ দুই বছরে ৯ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার ৬৬৩ টাকা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে পরিশোধ করা হয়েছে। কল্যাণ তহবিল নীতিমালা ২০২২ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে প্রণয়ন করা হয়েছে। গত বছর কল্যাণ তহবিল ও শিক্ষা সহায়তা তহবিল খাতে ১৮৪ জনকে ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। সাফজয়ী নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের বরণের জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজস্ব দক্ষ কারিগর দিয়ে ছাদখোলা বাস প্রস্তুত করা হয়, যা বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিআরটিসির যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিআরটিসি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৭৯৪ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৬২ জন নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেয়। তাছাড়া প্রথমবারের মতো দপ্তর/সংস্থাপ্রধান হিসেবে ২০২১-২২ অর্থবছরে চেয়ারম্যান, বিআরটিসি শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএতে) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থাগুলোর মধ্যে বিআরটিসি প্রথম স্থান অর্জন করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের সুবিধার্থে ২১টি জেলার ২৩টি রুটে ৬০টি বাসের সেবা চালু করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বিআরটিসির পর্ষদ গঠন ও কার্যক্রম ফের চালু করা হয়েছে। বর্তমান গাড়ির নম্বর অনুসারে মেরামত বাজেট দেওয়া হয় এবং যথাযথভাবে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। বর্তমানে বিআরটিসির বহরে সচল বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৩৫০টি। বিআরটিসির বিভিন্ন বাস ডিপোতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পেট্রোলপাম্পগুলো সচল করা হয়েছে। যার ফলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ও জ¦ালানি খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের সব রেকর্ড ভেঙে বিআরটিসির স্বর্ণযুগ চলছে। বিআরটিসিতে আমিই প্রথম এমন চেয়ারম্যান, যিনি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রকার টাকা না নিয়ে নিজস্ব আয় থেকে খরচ চালিয়ে যাচ্ছি। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে বিআরটিসিকে এক অনন্য উচ্চতায় নেওয়া হয়েছে। আমি বিআরটিসিতে যোগদানের পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে যে কাজ শুরু করেছিলাম, সেটির ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিআরটিসিতে আসার আগে ১০০টির বেশি সমস্যা চিহ্নত করেছিলাম। শুরু থেকে প্রথমে ভয় ছিল সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে পারব কি না। কিন্তু তখনকার সেই পুরনো বাসগুলো দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজকের এ অবস্থানে এনেছি। যদিও একটি পক্ষ নানাভাবে এ অর্জনকে মøান করতে চায়। কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে আমি বিআরটিসি উন্নয়নে কাজ করে যাব।’