২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৮:৩৮:০৪ অপরাহ্ন


যেসব পশুতে কোরবানি করা মাকরুহ
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৬-২০২৩
যেসব পশুতে কোরবানি করা মাকরুহ ফাইল ফটো


কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য পশু চার ধরনের দোষ থেকে মুক্ত থাকা জরুরি। পশু স্পষ্ট কানা হওয়া, স্পষ্ট রোগী হওয়া, স্পষ্ট খোঁড়া হওয়া এবং এমন দুর্বল হওয়া, যার শরীরে কোনো মাংস নেই। আবার এমন অনেক পশু আছে যা দিয়ে কোরবানি দেওয়া মাকরুহ। সেগুলো কেমন?

১. কান কাটা বা শিং ভাঙা পশু: এসব পশু দ্বারা কোরবানি করা মাকরুহ। তবে তা দ্বারা কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। কারণ, এতে মাংসের কোনো ক্ষতি বা কমতি হয় না এবং সাধারণত এমন ত্রুটি পশুর মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু যে পশুর জন্ম থেকেই শিং বা কান নেই তার দ্বারা কোরবানি মাকরুহ নয়। যেহেতু ভাঙা বা কাটাতে পশু রক্তাক্ত ও ক্লিষ্ট হয়; যা এক প্রকার রোগের মতো। কিন্তু জন্ম থেকে না থাকাটা এ ধরনের কোনো রোগ নয়। অবশ্য পূর্ণাঙ্গ পশুই উত্তম।

২. লেজ কাটা পশু: যে পশুর পূর্ণ অথবা কিছু অংশ লেজ কাটা গেছে তার দ্বারা কোরবানি করা মাকরুহ। ভেড়ার পুচ্ছে মাংসপিণ্ড কাটা থাকলে তার কোরবানি সিদ্ধ নয়। যেহেতু তা এক স্পষ্ট কম এবং ইস্ফিত অংশ। অবশ্য এমন জাতের ভেড়া যার পশ্চাতে মাংস পিণ্ড হয় না তার দ্বারা কোরবানি শুদ্ধ হবে।

৩. কান ছেঁড়া, দৈর্ঘ্যে ছেঁড়া, পশ্চাৎ থেকে ছেঁড়া, সম্মুখ থেকে প্রস্থে ছেঁড়া, কান ফাটা ইত্যাদি।

৪. লিঙ্গ কাটা পশু। যেহেতু খাসির দেহ হৃষ্টপুষ্ট ও মাংস উৎকৃষ্ট হয়।

৫. দাঁত ভাঙা ও চামড়ার কোনো অংশ অগভীর কাটা বা ছেঁড়া ইত্যাদি।

কোরবানির পশু নির্ধারণে মুসলিমকে সবিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত। যাতে পশু সর্বগুণে সম্পূর্ণ হয়। যেহেতু এটা আল্লাহর নিদর্শন ও মর্যাদাযোগ্য দ্বীনী প্রতীকসমূহের অন্যতম, যা আত্মসংযম ও তাকওয়ার পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা বলেন-

ذلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مَنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ

‘এটাই হলো আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।’ (সুরা হজ: আয়াত ৩২)

নির্দিষ্টভাবে কোরবানির পশু যে এক দ্বীনী প্রতীক এবং তার যত্ন করা যে আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদার শামিল, সে কথা অন্য এক আয়াত আমাদের এভাবে নির্দেশ করে-

وَ الۡبُدۡنَ جَعَلۡنٰهَا لَکُمۡ مِّنۡ شَعَآئِرِ اللّٰهِ لَکُمۡ فِیۡهَا خَیۡرٌ

‘আর কুরবানীর উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ।...’ (সুরা হজ: আয়াত ৩৬)

এখানে কোরবানি পশুর মর্যাদা হবে তা উত্তম নির্বাচনের মাধ্যমে। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘কোরবানি পশুর সম্মান করার অর্থ হল, পুষ্ট মাংসবহুল, সুন্দর ও বড় পশু নির্বাচন করা।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগেও মুসলিমগণ কোরবানির জন্য দামী পশু ক্রয় করতেন, মোটা-তাজা এবং উত্তম পশু বাছাই করতেন; যার দ্বারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর তাজিম ঘোষণা করতেন। যা একমাত্র তাঁদের তাকওয়া, আল্লাহর প্রতি ভীতি ও ভালবাসা থেকে উদগত হতো।

তবে উত্তম ও পুষ্ট পশুর কেনার মানে যেন এই না হয় যে, মোটা-তাজা পশু কোরবানি করার উদ্দেশ্য কেবল উত্তম মাংস খাওয়া এবং আপোসে প্রতিযোগিতা করা। বরং উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর নিদর্শন ও ধর্মীয় এক প্রতীকের তাজিম করা। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।

সুতরাং কোরবানি দাতার উচিত, ত্রুটিমুক্ত সুন্দর ও উত্তম পশু ক্রয় করা। দোষহীন পশু কোরবানির জন্য নির্বাচন করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উত্তম ও দোষমুক্ত পশু কোরবানি দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।