এটি ছিল নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমল। তিনি জোহরের আজান শুনে ওজু করে ঘরেই জোহরের ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে নিতেন। তিনি দুপুরের সময় এই আকাঙ্ক্ষা করতেন যেন এই সময়টায় তাঁর আমল আসমানে উঠে যায়। সুবহানাল্লাহ!
দিনের দুপুরটা যেভাবে শুরু হতো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের। সূর্যটা যখন সামান্য পশ্চিমে ঢলে যায়। তখন মাসজিদ থেকে হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর কণ্ঠে জোহরের আজানের ধ্বনি ভেসে আসতো।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তন্দ্রায় থাকলে আজান শুনে জেগে উঠতেন। আজানের শব্দগুলো পুনরাবৃত্তি করে জবাব দিতেন। ওজুর প্রয়োজন হলে ওজু করে বাড়িতেই পড়ে নিতেন চার রাকাত সুন্নত। নবিজি বলতেন, ‘এই সময়ে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে যায়। এমন সময়ে আমার একটা ভালো আমল আসমানে উঠুক সেটা আমার খুব পছন্দ।’
বর্তমান সময়ে অনেকেই জোহরের এই চার রাকাত সুন্নতের ব্যাপারে অত্যন্ত গাফিল। অথচ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইচ্ছা ছিল এই আমলটা করতেন, যেন এই সময়টায় তাঁর আমল আসমানে উঠে যায়। সুবহানাল্লাহ! তিনি যদি আল্লাহর নবি হয়ে এই চিন্তা লালন করেন, তবে আমাদের মতো গুনাহগারদের জন্য কি এটা আরও বেশি জরুরি নয়?
হ্যাঁ, জোহরের ফরজের আগের ৪ সুন্নত নামাজ সব মুমিন মুসলমানের জন্য জরুরি। এই চার রাকাত নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদা। কখনও জোহরের নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে, জোহরের পর দুই রাকাত সুন্নত পড়ে তারপর আগের চার রাকাত সুন্নত আদায় করে নেওয়া কর্তব্য। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় জোহরের ফরজের আগের ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ার গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে-
১. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জোহরের আগে চার রাকাত সুন্নত ও জোহরের পর দুই রাকাত সুন্নত পড়তেন।’ (তিরমিজি ১/৫৫০)
২. হজরত উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জোহরের আগে এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, জাহান্নামের আগুন আল্লাহ তাআলা তার ওপর হারাম করে দেবেন।’ (তিরমিজি ১/৫৫৩)
৩. হজরত আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি আমার বোন উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে (প্রিয় নবিজির সা. স্ত্রী) এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘আমি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জোহরের নামাজের আগে এবং পরে চার রাকাত সুন্নত নামাজ এর পূর্ণ খেয়াল রাখবে (নিয়মিত আদায় করবে), মহান আল্লাহ তাআলা তার থেকে জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। (তিরমিজি ১/৫৫৪)
৪. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনি কখনই জোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত ও ফজরের আগের দুই রাকাত সুন্নত ছাড়তেন না।’ (বুখারি ১১৮২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জোহরের ফরজের আগের ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ নিয়মিত পড়ার তাওফিক দান করুন। অবহেলা করে তা ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।