২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৭:০২:৫৯ অপরাহ্ন


দাজ্জাল যেসব শহরে ঢুকতে পারবে না
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৫-২০২৩
দাজ্জাল যেসব শহরে ঢুকতে পারবে না ফাইল ফটো


কেয়ামতের সবচেয়ে বড় আলামতে একটি হলো দাজ্জালের আগমন। দাজ্জাল সারা পৃথিবী চড়ে বেড়াবে। আল্লাহ তাআলা দুটি অঞ্চলকে দাজ্জালের হাত থেকে রক্ষা করবেন। তাই দাজ্জাল তার দলবল নিয়ে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না। মদিনার অদূরে এসে তার মিশন থেমে যাবে। দাজ্জাল যেসব পবিত্র স্থানে ঢুকতে পারবে না এ সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা সুস্পষ্ট করেছেন। যেসব নগরীকে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতার মাধ্যমে নিরাপত্তা দান করবেন। হাদিসের বর্ণনা হলো-

১. হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

يْسَ مِنْ بَلَدٍ إِلاَّ سَيَطَؤُهُ الدَّجَّالُ إِلاَّ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةَ لَيْسَ لَهُ مِنْ نِقَابِهَا نَقْبٌ إِلاَّ عَلَيْهِ الْمَلاَئِكَةُ صَافِّينَ يَحْرُسُونَهَا ثُمَّ تَرْجُفُ الْمَدِينَةُ بِأَهْلِهَا ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ فَيُخْرِجُ اللهُ كُلَّ كَافِرٍ وَمُنَافِقٍ

‘মক্কা ও মদিনা ছাড়া এমন কোনো শহর নেই যেখানে দাজ্জাল পদচারণ করবে না। মক্কা এবং মদিনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। এরপর মদিনা তার অধিবাসীদেরকে নিয়ে তিনবার কেঁপে উঠবে এবং আল্লাহ তাআলা সব কাফের এবং মুনাফিকদেরকে বের করে দেবেন।’ (বুখারি ১৮৮১)

২. হজরত আবু বকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনাতে দাজ্জালের ত্রাস ও ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। ঐ সময় মদিনার সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক পথে দু’জন করে ফেরেশতা (মোতায়েন) থাকবে।’ (বুখারি ১৮৭৯)

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

عَلَى أَنْقَابِ الْمَدِينَةِ مَلاَئِكَةٌ لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ وَلاَ الدَّجَّالُ

‘মদিনার প্রবেশ পথসমূহে ফেরেশতারা পাহারায় নিয়োজিত আছে। তাই প্লেগ রোগ এবং দাজ্জাল মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি ১৮৮০)

৪. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন। (দাজ্জাল সম্পর্কে) বর্ণিত কথাগুলোর মাঝে তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, মদিনার প্রবেশ পথে অনুপ্রবেশ করা দাজ্জালের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে। তাই সে মাদিনার উদ্দেশে যাত্রা করে মদিনার কাছাকাছি কোনো একটি বালুকাময় জমিতে অবতরণ করবে। তখন তার কাছে এক ব্যক্তি যাবে। যে উত্তম ব্যক্তি হবে বা উত্তম মানুষের একজন হবে। আর সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই হলে সেই দাজ্জাল! যার সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন।

দাজ্জাল বলবে, আমি যদি একে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করতে পারি তাহলেও কি তোমরা আমার ব্যাপারে সন্দেহ করবে?

তারা বলবে, না। এরপর দাজ্জাল লোকটিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। জীবিত হয়েই লোকটি বলবে, আল্লাহর শপথ! আজকের চেয়ে অধিক প্রত্যয় আমার আর কখনো ছিল না। এরপর দাজ্জাল বলবে, আমি তাকে হত্যা করে ফেলব। কিন্তু সে লোকটিকে আর হত্যা করতে সক্ষম হবে না। (বুখারি ১৮৮২, মুসলিম ৫২/২১, ২৯৩৮, মুসনাদে আহমাদ ১১৩১৮)

৫. একজন সাহাবি থেকে এ মর্মে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সে চারটি মসজিদের কাছাকাছি হতে পারবে না-

> মসজিদুল হারাম (পবিত্র মক্কা);

> মসজিদে নববি (পবিত্র মদিনা);

> মসজিদে তূর ও

> মসজিদুল আকসা। (মুসনাদে আহমদ)

উল্লেখ্য, দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে ‘ইসফাহান’ থেকে। ‘ইসফাহান’ খোরাসানের একটি প্রসিদ্ধ এলাকা। যা বর্তমান ইরানের জাগ্রোস পর্বতমালার পাদদেশে জায়েন্দে নদীর তীরে শহরটি অবস্থিত। হাদিসে পাকে এসেছে-

৫. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দাজ্জাল ইসফাহানের ইহুদিয়া থেকে বের হবে।’ (মুসনাদে আহমদ২৪৫১১)

দাজ্জাল যেমন কয়েকিট পবিত্র নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না তেমনি সে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের হাতে ধ্বংস হবে। হাদিস পাকে এসেছে-

৬. হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মাসিহ দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে আগমন করে মদিনায় প্রবেশ করতে চাইবে। এমনকি সে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এরপর ফেরেশতারা তার চেহারা (গতি) সিরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দেবেন এবং সেখানেই সে (হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের হাতে) ধ্বংস হবে।’ (মুসলিম ১৩৮০)

আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির সবাইকে দাজ্জালের ভয়াবহ ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।