২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৫:৪৬:০৩ অপরাহ্ন


ইসলামে মায়ের মর্যাদা
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৫-২০২৩
ইসলামে মায়ের মর্যাদা ফাইল ফটো


ইসলামে মাকে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া হয়েছে। কোরআন-হাদিসে বহুবার মায়ের কথা বলা হয়েছে। এমনকি মা মুসলমান হোক আর মুশরিকা হোক, মায়ের সঙ্গে কখনোই বেয়াদবি করা যাবে না। মায়ের মর্যাদা ও সম্মানে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবনের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মায়ের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা এটি। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে কাঁদছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আবু হুরায়রা তুমি কাঁদছ কেন?’ আবু হুরায়রা বললেন, ‘আমার মা আমাকে মেরেছেন।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কেন, তুমি কি কোনো বেয়াদবি করেছো?’ আবু হুরায়রা বললেন, ‘না, কোনো বেয়াদবি করিনি। আপনার দরবার থেকে বাড়ি যেতে আমার রাত হয়েছিল। তাই আমার মা আমাকে দেরি করার কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আপনার কথা বললাম। আমার মা মুশরিকা। তাই আপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারলেন আর বললেন, ‘হয় আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবার ছাড়বি।’ আমি বললাম, ‘হে আমার মা! আপনি বয়স্ক মানুষ। আপনার গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে মারতে থাকুন। এবং বাড়ি থেকে বের করে দিন। তবুও আমি আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না।’

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমার মা তোমাকে মেরে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছো? এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই।’ আবু হুরায়রা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি নালিশ করতে আসিনি।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতে চাইলেন, ‘তাহলে কেন এসেছো?’ আবু হুরায়রা বললেন, ‘আমি জানি, আপনি আল্লাহর নবি। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেন।’

রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আবু হুরায়রার আম্মাকে হেদায়েত দান করুন।’

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করলেন আর আবু হুরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়াচ্ছেন। পেছন থেকে কয়েকজন সাহাবা আবু হুরায়রার জামা টেনে ধরেন এবং বলেন, ‘হে আবু হুরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন?’ আবু হুরায়রা বললেন, ‘হে সাহাবীগণ, আমার জামা ছেড়ে দাও। আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দেখতে চাই, আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া আগে পৌঁছে গেছে।’

আবু হুরায়রা দরজায় আওয়াজ দিতেই ভেতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললেন। আবু হুরায়রা দেখলেন তার মার সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। মা তাকে বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি। ভাবলাম, আমার ছেলে তো কোনো খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? বরং আমি তোমাকে মেরে লজ্জায় পড়েছি। হে আবু হুরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে নিয়ে চলো।’

তখনই আবু হুরায়রা তার মাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে নিয়ে গেলেন। তার মা সেখানেই কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। বাবা-মা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। (তিরমিজি)

এ ঘটনা থেকে এই শিক্ষা নিতে হবে যে, যত জুলুম-নির্যাতন-অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয় হোক, মায়ের সঙ্গে অসদাচরণ করা যাবে না। মাকে পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা ও সম্মান দিতে হবে। আল্লাহ সবাইকে মায়ের খেদমত করে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।