বয়স ২৫-২৬ হলেই হল। বাড়ি থেকে শুরু হয়ে যায় বিয়ের জন্য চাপ। জীবনে থিতু হতে হবে। জীবনে যদি কোনও বিশেষ মানুষ থাকে, তাহলে তাও খানিক নিশ্চিন্ত। কিন্তু প্রেমিকা না থাকলে আরও চাপ। তখন শুরু হবে বিয়ে করার জন্য চাপ দেওয়া। মোট কথা, থিতু হতেই হবে। ভারতীয় যুবকদের বিয়ে করার জন্য বাড়ি থেকে চাপ অতি পরিচিত ঘটনা। তবে জানেন কি, শুধু ভারতীয় পুরুষরাই নন, একই চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা চিনের যুবকরাও! আর এই বিয়ের চাপ থেকে বাঁচতে অভিনব পন্থা আবিষ্কার করেছেন চিনা যুবকরা। বাবা-মা কিংবা পাড়া প্রতিবেশীকে দেখানোর জন্য প্রেমিকা ‘ভাড়া’ নিচ্ছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে সেদেশে রীতিমতো ফুলেফেঁপে উঠছে প্রেমিকা ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা।
কিন্তু প্রেম করলেই তো হয়, তা না করে প্রেমিকা ভাড়া নেওয়া কেন? বিবাহপোযোগী চিনা যুবকদের প্রেমিকা ভাড়া নেওয়ার পিছনে অনেক রকম কারণ রয়েছে। কেউ হয়তো সমকামী। কিন্তু বাড়িতে কিছুতেই সেকথা বলে উঠতে পারছেন না। বললেই যে তাঁরা খুশি মনে মেনে নেবেন, সব সময় তেমনটাও নয়। কিন্তু বিয়ের হাত থেকে তো বাঁচতেই হবে! তাহলে উপায় কী?
আবার কেউ কেউ আছেন, যাঁদের সমস্যা একটু অন্যরকম। তাঁরা বিয়ে করবেন না এমনটা নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে বিয়ে, প্রেম কিংবা থিতু হওয়া নিয়ে আদৌ ভাবছেনই না, আপাতত কেরিয়ারে উন্নতি করাই তাঁর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। তাই বাড়িতে যদি দেখানো যায়, তাঁর একজন সঙ্গিনী রয়েছে, তাহলে বাবা-মাকে বিয়ের ব্যাপারে আরও কিছুদিন ঠেকিয়ে রাখা যায়। ছেলের প্রেমিকা আছে জানলে তাঁরা একটু নিশ্চিন্ত হবেন। আবার পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয় স্বজনের প্রশ্নের হাত থেকেও বাঁচা যাবে।
প্রেমিকা ভাড়া দেওয়ার ব্যবসার পুরো বিষয়টি সামনে এনেছিলেন চিনের এক সাংবাদিক। তিনি জানিয়েছেন, বিয়ের চাপে জর্জরিত এই বিপদগ্রস্থ পুরুষকুলের মুশকিল আসান করছে একটি ওয়েবসাইট, যেটি অনেকটা ডেটিং অ্যাপের মতোই কাজ করে। অনলাইনে যুবক-যুবতীদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেয় সঙ্গিনী ভাড়া দেওয়ার প্ল্যাটফর্মটি। ওই সাংবাদিক ওয়েবসাইটটিতে একজন ‘ক্লায়েন্ট’ হিসেবে নিজেকে রেজিস্টার করেছিলেন। সেখান থেকেই উইচ্যাটের মাধ্যমে এক তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। ২৯ বছর বয়সি ওই তরুণী জানান, তিনি একটি মোটা মাইনের চাকরি করেন। কিন্তু উপরি-রোজগার হিসেবে বিয়েতে অনিচ্ছুক পুরুষদের ‘প্রেমিকা’ সেজে তাঁদের বাবা-মা কিংবা আত্মীয়দের সঙ্গে দেখাও করে আসেন তিনি।
ওই সাংবাদিকের সঙ্গে একদিন সময় কাটানোর জন্য ১ হাজার ইউয়ান (১২ হাজার টাকা) ছাড়াও অতিরিক্ত ৫০০ ইউয়ান (৬ হাজার টাকা) দাবি করেন তরুণী। এছাড়া ঘুরে বেড়ানোর জন্য ৩৫০ ইউয়ান (৪২০০ টাকা), এবং পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করার আগে ছবি তোলার জন্য আরও ২০ (২২৪ টাকা) ইউয়ান চার্জ করেন তিনি।
তবে ছুটির দিন হলে এই চার্জ বেড়ে যায় একধাক্কায়। সেই সময় দিনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ ইউয়ান (৩০ হাজার টাকা) চান তিনি। তবে ছুটির দিনে যেহেতু তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকেন, তাই সেই সময় তাঁর বদলে একই পেশায় থাকা অন্য এক ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে ওই সাংবাদিকের যোগাযোগ করিয়ে দেন তরুণী। আর এই যোগাযোগের কমিশন হিসেবে আরও ২০০ ইউয়ান (২৪০০ টাকা) চান ভাড়ার প্রেমিকা।
তরুণী জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন এই ব্যবসায় থাকলেও কোনওদিন কোনও ক্লায়েন্টের প্রেমে পড়ে যাননি তিনি। সাধারণত ‘প্রেমিক’-এর সঙ্গে সময় কাটানোর সময় তাঁদের হাত ধরতে দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে অতিরিক্ত টাকা দিলে তারচেয়ে বেশি এগোনোরও সুযোগ রয়েছে। মোটা টাকা পেলে চুম্বন করতে কিংবা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতেও আপত্তি নেই তাঁর, জানিযেছেন তরুণী।
তবে এমন নয় যে আজীবন এই কাজই করে যাবেন তিনি। মানুষের প্রেমিকা সাজতে সাজতে সত্যিকারের প্রেমিকা হওয়ার স্বাদও পেতে চান তিনি। উপযুক্ত সঙ্গী পেলে এই ব্যবসা ছেড়ে তাঁর হাত ধরেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন, এমনটাই জানিয়েছেন তরুণী।