ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ এর শুটিংয়ে শিডিউল ফাঁসানো ও সহ-নারী প্রযোজককে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন রহমত উল্ল্যাহ নামে এক প্রযোজক। ওই প্রযোজকের নামে এবার মানহানি মামলা করতে শনিবার রাতে গুলশান থানায় উপস্থিত হন শাকিব খান। তবে পুলিশ মামলাটি নেয়নি। মামলাটি আদালতে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আপনার ইস্যু বিগ ইস্যু, কিন্তু মামলা নেয়া যাবে না। বিষয়টা যেহেতু শাকিব খান তাই আমার এখন অনেকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি ঊর্ধ্বতন কারও সঙ্গে কথা না বলে এ মামলা নিতে পারব না। যেহেতু এখন অনেক রাত হয়ে গেছে তাই কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান থানায় হাজির হলে শাকিব খানকে ঠিক এভাবেই বলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরমান আলী।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার নিজের রুমে বসে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, শাকিব খান যে ধরনের অভিযোগ করতে এসেছেন তা থানায় নয় আদালতে করতে হবে। এ ধরনের অভিযোগ থানায় নেয়া সম্ভব না। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমনও বলেন, আমি মামলা নিতে পারব না। আর মামলা নেই নাই— এটা চাইলে কারও কাছে অভিযোগ করতে পারেন আমার বিরুদ্ধে।
শাকিব খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খায়রুল হাসান বলেন, যেহেতু এটা কগনিজেবল অপরাধ ছিল, তিনি ইচ্ছা করলে মামলা নিতে পারতেন।
কারণ এই ধরনের অভিযোগ সাধারণত থানায় রুজু করা হয়। আর যেগুলো নন কগনিজেবল অপরাধ সেগুলো আমরা আদালতে রুজু করি। কিন্তু এরপরও তিনি (ওসি) কেন মামলা নেন নাই এটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
আইনজীবী খায়রুল হাসান বলেন, যেহেতু আমাদের বিষয়টা ছিল চাঁদাবাজির দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারায় এবং যেটা সাধারণত রুজু করা হয় থানায়। আমরা সেই অনুযায়ী থানায় অভিযোগ রুজু করতে গেলাম। কিন্তু ওসি সাহেব কী কারণে, কী অদৃশ্য কারণে উনি আমাদের অভিযোগ আমলে নেননি এটা আমরা জানি না। থানায় অভিযোগ না নিয়ে উনি আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন আমরা যেন আদালতে মামলা করি।
খায়রুল হাসান আরও বলেন, থানায় সেবা পাওয়া পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। আমার মক্কেলেরও সে অধিকার ছিল। মানুষ বিপদে পড়ে থানায় যায়।
আমরাও সে কারণে গিয়েছিলাম। কিন্তু থানা থেকে আমাদের অভিযোগ গ্রহণ না করে, তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, আদালতে গিয়ে মামলা করার কথা বলে তিনি বেরিয়ে পড়েন।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান থানায় মামলা করতে উপস্থিত হন শাকিব। শাকিব খান জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। এ কারণে তিনি ভুয়া প্রযোজকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। প্রযোজক নামধারী এই প্রতারক যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেই কারণে আইনি ব্যবস্থা নিতে থানায় গিয়েছিলেন তিনি। মিথ্যা অভিযোগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত যেন অন্যায় অভিযোগকারী দেশ ছাড়তে না পারে সে কারণে এ ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি।
রাত ১২টার সময়ও থানায় অপেক্ষা করছিলেন শাকিব খান। পরে থানা থেকে বের হয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাংবাদিকদের শাকিব খান বলেন, রহমত উল্ল্যাহ সিনেমার ঘাড়ে বন্দুক রেখে টাকা দাবি করেছেন। কাল আমি মামলা করতে আদালতে যাব। অস্ট্রেলিয়ায় আমার বিরুদ্ধে মামলা হলে তো সেখান থেকে চলে আসতে পারতাম না।
শাকিব খান বলেন, রহমত উল্ল্যাহ নামে যিনি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক দাবি করছেন তিনি আসলে এ ছবির আসল প্রযোজক নন। সিনেমাটির আসল প্রযোজক হচ্ছেন ভারটেক্স মিডিয়ার জানে আলম। যা চুক্তিপত্রেও লিখিত আছে। বানোয়াট মিথ্যাচার করেছেন তিনি। অনেক লোক এতে জড়িত। সেই লোকেরা তাকে ইন্ধন দিয়েছেন বলেও দাবি করেন শাকিব খান। বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। এ কারণে আমি ভুয়া প্রযোজকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।
গত বুধবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে শাকিব খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার অন্যতম প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ। তাঁর অভিযোগ, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার দৃশ্যধারণের সময় এক নারী সহপ্রযোজককে ‘ধর্ষণ’ করেন শাকিব খান। এরপর তিনি দেশে পালিয়ে আসেন।