সতীশ কৌশিকের মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড়।সতীশ কৌশিকের বন্ধুর স্ত্রীর সন্দেহ, শিল্পীকে হত্যা করা হয়েছে। এবং তাঁর সন্দেহ, এই হত্যা করিয়েছেন তাঁর স্বামী। মারাত্মক গুরুতরএক অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তিনি এই বিষয়ে উচ্চ-পর্যায়ের তদন্তের জন্য দিল্লি পুলিশ কমিশনারকে একটি চিঠি লিখেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে একটি অনুলিপি পাঠিয়েছেন।
হোলির দিন সতীশ কৌশিক তাঁর বন্ধু বিকাশ মালুর ফার্মহাউসে একটি পার্টিতে যোগ দিতে দিল্লি যান। এই বিকাশই রয়েছেন সতীশের হত্যার পিছনে। এমনই অভিযোগ সানভির। তাঁর দাবি, সতীশ কৌশিক তাঁর স্বামীর বন্ধু এবং তিনি প্রায়ই ভারত ও দুবাইয়ে তাঁদের বাড়িতে যেতেন। সানভি মালু শনিবার গুরুতর অভিযোগটি করে বলেন, প্রায় তিন বছর আগে বিকাশ মালু নিজের ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য সতীশ কৌশিকের থেকে ১৫কোটি টাকা ধার নিয়েছিলেন। যা তিনি এখন ফেরত দিচ্ছিলেন না। এই টাকার লেনদেন নিয়ে সতীশ আর বিকাশের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত বছর ২৩ অগস্টদুবাইয়ে তাঁদের মধ্যে অর্থ নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল।লড়াইয়ের সময় সানভিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন। তখন বিকাশ বলেন, ভারতে গিয়ে তাঁর টাকা ফেরত দেবেন।
সানভি জানান, ঝগড়ার রাতে বেডরুমে যখন তিনি স্বামী বিকাশকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘সতীশজি কি টাকা ফেরত চাইছিলেন?’ বিকাশ নাকি বলেন, ‘পাগল লোকটা যে ১৫ কোটি দিয়েছিল, তা করোনায় ডুবে গিয়েছে।’ তার পরে সানভি নাকি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন এখন কী হবে? উত্তর বিকাশ নাকি বলেন, ‘পাগল নাকি! এই টাকা দেওয়া সম্ভব ন। একদিন রাশিয়ানরা ওকেডেকে নীল বড়ির ওভারডোজ দেবে, এবং ও মারা যাবে। কে ফেরত দিচ্ছে এই টাকা!’
সানভি দাবি করেছেন যে, তাঁর স্বামী বিকাশের কাছে কোকেন, এমডিএমএ, জিবিএইচ, গাঁজা, চরস, ব্লু পিলস, পিঙ্ক পিলসের মতো ওষুধের একটি বড় সংগ্রহ রয়েছে। যা তিনি দিল্লির সমস্ত ফার্ম হাউস পার্টিতে ব্যবহার করেন।সানভির বক্তব্য, তিনি যখনই বিকাশকে জিজ্ঞাসা করতেন, এই ওষুধ এবং বড়িগুলি কীসের জন্য, তিনি নাকি তাঁকে বলতেন, ‘তুমি বুঝবে না’।
সানভি অভিযোগ করেন যে, দুবাইয়ে যেদিন এই ঘটনা ঘটে, তার পরের দিন, অর্থাৎ ২৪ অগস্ট, সতীশ কৌশিক আবার তাঁর ১৫ কোটি টাকাফেরত চেয়েছিলেন। যখন বিকাশ মালু রেগে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে টাকা ফেরত দেব। এখন বেশি শব্দ করবেন না। আপনি ১৫কোটি টাকা নগদে দিয়েছেন। তাই আপনি কোনও আইনি পদক্ষেপ করতে পারবেন না। ধৈর্য ধরুন।’ এই কথা শুনে সতীশ কৌশিক সেখান থেকে উঠে বিকাশকে বললেন, ‘আপনি আমাকে ১৫ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কথা দিয়েছেন।’
বিকাশ মালু সেই রাতেই নাকি সানভিকে বললেন, ‘সতীশ কৌশিকের তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে এটা চাপা রাখা যাবে না।’ সানভি বলেন, এখন বিকাশের কথাই সত্যি হয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে সতীশ কৌশিকের মৃত্যুর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত। এ মামলায় সাক্ষী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সানভি।
সানভি বলেছেন যে রাজনীতিবিদ এবং পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে বিকাশ মালুর সুসম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা তাঁকে আইনের ঝামেলায় পড়া থেকে বাঁচান। শুধু তাই নয়, দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গেও বিকাশের যোগ রয়েছে এবং তার ছেলে আনাসও দুবাই পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। বিকাশ একজন পাকা অপরাধী এবং তাঁর বিরুদ্ধে বহু মামলা চলছে, যাতে তাঁর কারাবাসও নাকি হয়েছে।
শনিবার দিল্লি পুলিশ বিকাশের ফার্ম হাউস থেকে কিছু ওষুধ উদ্ধার করেছে। এখানেই দোলের দিন সতীশ কৌশিক একটি পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন। একদিন পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। পুলিশ অবশ্য বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে, ঘটনাস্থলে বা নিহতের ঘর থেকে কিছু সাধারণ ওষুধ ছাড়া সন্দেহজনক বা আপত্তিকর কিছু পাওয়া যায়নি।সব প্রত্যক্ষদর্শীকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করে তদন্ত করা হচ্ছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, সানভি তাঁর স্বামী বিকাশ মালুর সঙ্গে বর্তমানে থাকেন না। তিনি বিকাশ মালু এবং তাঁর ছেলে বিনীত মালুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাও করেছেন।