২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০২:৪৬:২৫ অপরাহ্ন


মধ্যপাড়ায় আরও এক পাথর খনির সন্ধান
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৩
মধ্যপাড়ায় আরও এক পাথর খনির সন্ধান ফাইল ফটো


উৎপাদনে থাকা দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনি সংলগ্ন এলাকায় নতুন আরও একটি খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা জরিপ) শেষ হয়েছে। এ ছাড়া নতুন খনিটি উন্নয়নের জন্য সরকারের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে এবং বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে প্রতিদিন উৎপাদন দাঁড়াবে ১৬ হাজার ৬ টনে। বছরে

হবে ৪.৯৫ মিলিয়ন টন (৫০ লাখ টনের বেশি)। যা দিয়ে দেশের চাহিদার ৩০ শতাংশ পূরণ হবে।

মধ্যপাড়ায় পাথর খনির নতুন ফেইজের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজে নিয়োজিত প্রকল্প পরিচালক ও এমজিএমসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইউজিওঅ্যান্ডএম) প্রকৌশলী মো. অবায়দুল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, নতুন এ খনিটি মধ্যপাড়া পাথর খনির দ্বিতীয় ফেইজ। ২০১৮ সালে এ নতুন খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালে শেষে হয়। খনির নতুন

ফেইজ (নতুন মুখ) ফিজিবিলিটি স্টাডিতে কনসালট্যান্ট নিয়োজিত ছিল ইউএসের জয়েন্ট বয়েন্ড কোম্পানি ও দেশীয় কোম্পানি মজুমদার এন্টারপ্রাইজ।

তিনি জানান, কনসালট্যান্ট কোম্পানির কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এখন খনি উন্নয়নে সরকারের নির্দেশনা পেলে উৎপাদনে যেতে প্রায় ৫ বছর সময় লেগে যাবে। নতুন খনিটি উৎপাদনে গেলে সেখান থেকে প্রতিদিন ১১ হাজার টন করে পাথর উত্তোলন হলেও ৪০ বছর পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হবে।

এমজিএমসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও সার্ভিস) শাহ মো. রেজওয়ানুল হক আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটিডের মধ্যপাড়া খনি থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। পর পর চার অর্থবছর আমরা লাভ করেছি। বর্তমানে খনির উত্তোলিত পাথর দিয়ে দেশের বিভিন্ন নির্মাণকাজের ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হচ্ছে। নতুন খনিটি উৎপাদনে গেলে বা পাথর উত্তোলন হলে দেশের চাহিদা ৩০ শতাংশ পূরণ হবে।

মধ্যপাড়া দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনি, যা পৃথিবীর অন্যতম ভূগর্ভস্থ আগ্নেয়শিলা, গ্রানাইট, ডায়োরাইট এবং গ্রানোডায়োরাইট শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ভিত্তিশিলা হওয়ায় এ খনির মাইনিং লিজ এলাকার পাথরের মজুদ অপরিমেয়, যা অন্য যে কোনো ভূগর্ভস্থ খনির তুলনায় অধিক বছর ধরে উৎপাদন করা সম্ভব।

জানা যায়, বর্তমানে খনিটির উৎপাদন কাজে নিয়োজিত আছে দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বেলারুসভিত্তিক জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোটিয়াম (জিটিসি)। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন খনি থেকে বর্তমানে পাঁচ হাজার টন পাথর উত্তোলন করছে। এর ফলে টানা চার অর্থবছর খনিটি প্রায় ৮২ কোটি টাকা লাভের মুখ দেখেছে। সর্বশেষ বার্ষিক সাধারণ সভার সূত্র মতে ২০২১-২২ অর্থবছরে লাভ হয়েছে ১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

খনির একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে খনিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় দফায় ছয় বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। বর্তমানে জিটিসির অর্ধশতাধিক বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ, অর্ধশত দেশি খনি প্রকৌশলী এবং প্রায় সাড়ে ৭০০ দক্ষ শ্রমিক এখানে পাথর উত্তোলন ও উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত আছেন। ফলে খনি থেকে লক্ষ্যমাত্র অনুযায়ী পাথর উৎপান ও খনি উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। করোনা মহামারীতেও সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন সচল রাখার ফলে খনিটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান থাকা সম্ভব হয়েছে।

জানা যায়, মধ্যপাড়া খনি থেকে আহরিত পাথর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সেতু বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব রেললাইন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বার্ষিক সাধারণ সভার প্রতিবেদন মতে, দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকা-ে গ্রানাইট পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই গ্রানাইট পাথর উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন খনি উন্নয়নে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা জরিপ) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্টাডির ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় নতুন খনি উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দেশে ক্রমবর্ধমান পাথরের চাহিদা, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট ইত্যাদি বিবেচনা করে রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী নিয়োগ করে মধ্যপাড়া খনির দ্বিতীয় ফেজের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।