আসন্ন পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সারা দেশে ১ কোটি ৮ লাখ অতিদরিদ্র পরিবারকে বিনা মূল্যে চাল দেবে সরকার। খাদ্যশস্যের দাম বাড়ায় অতিদরিদ্র মানুষের সাহায্যার্থে মানবিক কর্মসূচি ভিজিএফের আওতায় এ চাল দেওয়া হবে। খুব শিগিগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবার দেশে আমনের ভালো ফলন হলেও চালের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। উলটো দাম বেড়েছে। কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় ধান, চাল গুদামজাত করে রেখেছে। ফলে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের মোটা চাল ইরি/স্বর্ণার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। মাঝারিমানের চাল পাইজাম/লতা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। আর সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮২ টাকায়। অথচ মৌসুমের সময় স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম কম থাকার কথা।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে দেশে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও উৎপাদন হয়েছে ৫৯ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে। আর উত্পাদন হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টন। কিন্তু এর প্রভাব নেই চালের বাজারে।
সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, চালের দাম বাড়লেও স্বল্প আয়ের মানুষের সুবিধার্থে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় খাদ্যশস্য দেবে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে তিন মাসে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৮ লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হবে। এরমধ্যে আগামী রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ১ কোটি ৮ লাখ পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে চাল দেওয়া হবে। এ কর্মসূচিতে ১ লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এত বিপুল পরিমাণে চাল সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিলে খাদ্যশস্যের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ম্যানুয়াল ডাটাবেজের পরিবর্তে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়ন করে আগের উপকারভোগীর তালিকা থেকে ডুপ্লিকেট, অন্যান্য সরকারি কর্মসূচি হতে সুবিধাপ্রাপ্ত এবং নীতিমালা অনুযায়ী অযোগ্য দুই লাখ উপকারভোগীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব সাশ্রয় হয়েছে। এই সাশ্রয়কৃত অর্থে আরো নতুন ২ লাখ উপকারভোগী বাছাই করা হচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে নতুন এই উপকারভোগীরা সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে আশা করছি।
কারা পাবেন ভিজিএফ? সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া ১২ শর্তের মধ্যে চারটি পূরণ করে এমন ব্যক্তি বা পরিবারকে দুস্থ হিসেবে গণ্য করে ভিজিএফ সহায়তা দিতে হবে। যেমন—১. যে পরিবারের মালিকানায় কোনো জমি নেই বা ভিটাবাড়ি ছাড়া কোনো জমি নেই ২. যে পরিবার দিনমজুরের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ৩. যে পরিবার মহিলা শ্রমিকের আয় বা ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল ৪. যে পরিবারে উপার্জনক্ষম পূর্ণ বয়স্ক কোনো পুরুষ সদস্য নেই ৫. যে পরিবারে স্কুলগামী শিশুকে উপার্জনের জন্য কাজ করতে হয় ৬. যে পরিবারে উপার্জনশীল কোনো ব্যক্তি নেই ৭. যে পরিবারের প্রধান স্বামী পরিত্যক্তা বা তালাকপ্রাপ্ত মহিলা রয়েছে ৮. যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ৯. যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল ও অক্ষম প্রতিবন্ধী ১০. যে পরিবার কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রাপ্ত হয়নি ১১. যে পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে চরম খাদ্য বা অর্থ সংকটে পড়েছে এবং ১২. যে পরিবারের সদস্যরা বছরের অধিকাংশ সময় দুই বেলা খাবার পায় না।