♦ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে ইসি ♦ ডিসেম্বরে সম্ভব না হলে জানুয়ারির প্রথম দিকও মাথায় রাখছে কমিশন ♦ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ২ মার্চ ♦ অধিকাংশ আসনেই ব্যালট ♦ ৫০-৭০ আসনে ইভিএম ♦ থাকতে পারে সিসি ক্যামেরাও
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দুই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। ডিসেম্বরে ভোট হলে নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা; আর জানুয়ারিতে ভোট হলে ২০ নভেম্বরের পর তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। চলতি বছর ডিসেম্বরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ১ ফেব্রুয়ারি তিনি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সফল ও অর্থবহ করার বিষয়ে কমিশনের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। এ ছাড়া ৫০ থেকে ৭০টি আসনে ইভিএমে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য জানান। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের জন্য ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে; তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সংসদীয় আসন অনুযায়ী ৩০০ এলাকার তালিকা প্রস্তুত করবে কমিশন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ২ লাখ মেশিন কেনার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। ইসির হাতে ব্যবহারযোগ্য যেসব ইভিএম রয়েছে, তা দিয়ে ৫০-৭০ আসনে ভোট গ্রহণ সম্ভব। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কত আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত জানাবে ইসি। এজন্য নির্বাচন কমিশন দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ইভিএমের কোয়ালিটি চেক করছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সূচনা হয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের কথা বলা হয়েছে। সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করতে সরকারের কাছে বরাদ্দ চাইবে নির্বাচন কমিশন। ইভিএম কেনার প্রকল্পে সিসি ক্যামেরার জন্যও প্রায় ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল ইসি। কিন্তু আপাতত ইভিএম প্রকল্প স্থগিত হওয়ায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অন্যান্য নির্বাচনী ব্যয়ের সঙ্গে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ চাওয়ার চিন্তা করছে ইসি। এ ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে ৫০ থেকে ৭০ আসনে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের হাতে যে ইভিএম আছে সেগুলো দিয়ে আমরা নির্বাচন করব। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। তবে ৫০ থেকে ৭০-এর মধ্যে (ইভিএম ব্যবহারের) বিষয়টা থাকবে।’ সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ‘আমাদের হানড্রেড পারসেন্ট ইচ্ছা আছে। কমিশন অবশ্যই সিসি ক্যামেরা চায়।’ অর্থনীতি এখানে বড় জিনিস বলে মনে করেন এই কমিশনার। তিনি বলেন, ‘ইভিএম প্রজেক্ট পাস করার বিষয় আছে। কিন্তু সিসি ক্যামেরার জন্য প্রজেক্ট পাস করতে হবে না। এটা নির্বাচনের বাজেটের ব্যাপার। সিসি ক্যামেরা বাদ দিছি এমনও ডিসিশন হয় নাই। আমরা আনবই এমন ডিসিশনও হয় নাই।’ ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএম কেনার নতুন প্রকল্প স্থগিত হওয়ায় প্রায় ২৫০ আসনে কাগজের ব্যালটে ভোট হতে পারে; এজন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বাকি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেই সিদ্ধান্ত কবে পাওয়া যাবে, সেজন্য অপেক্ষা করছে ইসি সচিবালয়। ব্যালটে ভোটের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে থাকা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করা হয়েছে। ৩ লাখ ২ হাজার ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী পাওয়া গেছে। বেশ কিছু ব্যালট বাক্স ভেঙে গেছে। যা আছে তা দিয়ে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট গ্রহণ সম্ভব হবে। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশে ভোট কেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট নিতে প্রতি ভোটকক্ষের জন্য একটি ইভিএম প্রয়োজন হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি বিবেচনায় রেখে প্রতি কেন্দ্রের জন্য মোট কক্ষের অর্ধেকসংখ্যক ইভিএম অতিরিক্ত সংরক্ষণ করা হয়। তাই ইসির হাতে যেসব ইভিএম আছে তা দিয়ে ৫০ থেকে ৭০ আসনে ভোট করা সম্ভব হবে।