০২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৪:৩২:৫১ অপরাহ্ন


রিজার্ভ চুরির মামলার সাক্ষ্য দিতে ফিলিপাইনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০২-২০২৩
রিজার্ভ চুরির মামলার সাক্ষ্য দিতে ফিলিপাইনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ফাইল ফটো


বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় করা একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেনসহ বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের দু'জন এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের আরো দুইজন কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেবেন বলে জানা গেছে। এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

২০১৬ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ ডলার চুরি হয়। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সেই টাকা রক্ষিত ছিল। সেখান থেকে টাকা চুরি করে ফিলিপাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে এসব ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। 

আজমালুল হোসেন বিবিসিকে বলেন, ‘এখানে ফিলরেম মানি কর্পোরেশন নামে একটা মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান ছিল যারা আমাদের চুরির টাকা পেসোতে কনভার্ট করে এবং বিভিন্ন জায়গায় দেয়। ক্যাসিনোতে দিয়েছে। সেই ফিলরেমের দুইজন শেয়ারহোল্ডার, তারা স্বামী-স্ত্রী, আমাদের অনুরোধে তাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা করেছে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল। সেই মামলায় এখন সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ্যাকিং করে যে কোটি কোটি ডলার ফিলিপাইনে পাঠানো হয়েছিল, সে বিষয়েই বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণ তুলে ধরেছে।

আজমালুল হোসেন বলেন, ‘হ্যাকিংয়ের এভিডেন্স ওখান থেকে আসছে। হ্যাকিংয়ের ভিকটিম তো আমরা। টাকাটা হ্যাকিংয়ের পরে এখানে এসেছে, এখানকার খবর ওদের জানা আছে। আমাদের ওখানে হ্যাকিংয়ের পুরো তথ্যটা ওদের কাছে নেই। সেটাই তাদের দেয়া হচ্ছে। এখন প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য চলছে।’

তিনি জানান, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের ব্যাঙ্ক আরসিবিসি একটি মামলা করেছিল, সেটা বহু  আগেই খারিজ হয়ে গেছে।

চুরির ঘটনায় ম্যানিলায় আরও অনেকগুলো মামলা হয়েছিল। সেগুলোর কোন কোনটাতে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল, তাতেও বাংলাদেশ সাক্ষ্য দিয়েছে। আরসিবিসি শাখা ম্যানেজার মায়া দেগুইতোসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সাজাও হয়েছে।

তবে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল, তা খারিজ হয়ে যায়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক একটি কনভেনশন রয়েছে, যার মাধ্যম একাধিক দেশ থেকে যৌথ আইনি সহায়তার সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগের আওতায় বাংলাদেশ ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করার পর তারা বাংলাদেশের পক্ষে মামলাগুলো করেছে। চুরি যাওয়া ডলারের মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। এরপর এফবিআইয়ের সহযোগিতায় ফিলিপাইন থেকে দেড় কোটি ডলার ফেরত পেয়েছে। 

নিউইয়র্কের মামলা বিচারে গড়াতে পারে

বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির মামলা বাতিলের জন্য ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক, কিং অংসহ ১৮ ব্যক্তি যে দুটি আবেদন করেছিলেন, ১৩ই জানুয়ারি আদালত তা খারিজ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দিতে এবং মধ্যস্থতারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের মামলার নিয়ম অনুযায়ী, আইনগত প্রক্রিয়া শুরুর অংশ হিসাবে উভয়পক্ষ একে অপরের কাছে মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য বা কাগজপত্র চাইতে পারে। সাধারণত দুই পক্ষের কাছে যেসব নথিপত্র আছে, সেগুলো বিনিময় করতে হয়। এসব তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলার আইনগত কার্যক্রম শুরু হবে।  

অনেক সময় কোনো কোনো পক্ষ বা ব্যক্তি তথ্য দিতে নাও চাইতে পারে, কিন্তু তার ব্যাখ্যা থাকতে হবে।

এই পুরো প্রক্রিয়ায় এক বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মামলার আসল বিচার কার্যক্রম শুরু হতে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩১শে জানুয়ারি সেখানকার ডিসট্রিক্ট কোর্ট ফর দি সাউদার্ন ডিসট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে।

পরের বছর ২০শে মার্চ আদালত সেই আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার আদেশ দেয়। এরপর ২০২০ সালের ২৭শে মে নিউইয়র্কের কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর বিবাদীরা এখানেও মামলা খারিজ করে দেয়ার জন্য আবেদন করে।

কয়েক দফা শুনানির পর ২০২২ সালের ৮ই এপ্রিল আংশিক রায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেয় নিউইয়র্ক কাউন্টি কোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল করেছে বাংলাদেশ। বিবিসি বাংলা।