২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৮:৩০:০২ পূর্বাহ্ন


পর্যটনের মহাপরিকল্পনা : ৫০ পর্যটন স্পটে আসছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০১-২০২৩
পর্যটনের মহাপরিকল্পনা : ৫০ পর্যটন স্পটে আসছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ফাইল ফটো


বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিস্ময়কর উন্নতিতে সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারণ ঘটেছে পর্যটন খাতের। প্রতি বছর কোটি কোটি পর্যটক এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করছে। এতে পর্যটন খাতের ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠছে। এই খাতে বিপুল বিনিয়োগও করা হচ্ছে। অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশেও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার পর্যটনে তিন দশক মেয়াদি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
পর্যটন শিল্পের সেই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বিদেশি সংস্থা আইপিই গেøাবাল। ২০১৯ সালে সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)। চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাস মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি। তবে করোনা মহামারির কারণে যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় গেল বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে মহাপরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন শেষ হয়েছে। আগামী মার্চে চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রমতে, পর্যটন খাতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যায় হিসেবে খসড়া মহাপরিকল্পনায় বিন্যাস করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি, সংকট, সক্ষমতা, দুর্বলতা, সম্ভাবনার বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশীয় পর্যটনের ভিশন, মিশন, কৌশলগত দিক, অগ্রাধিকার ও সংযুক্তিগুলোও বিশ্লেষণ করা আছে। শেষ পর্যায়ে অঞ্চল বা আয়তন নির্দিষ্ট করে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত বছরের এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক ০২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পর্যটন খাতের সুপরিকল্পিত উন্নয়নে চূড়ান্ত হওয়ার পথে থাকা মহাপরিকল্পনায় দেশের ১০৫১টি পর্যটন স্পটকে চিহ্নিত করে সেগুলোর উন্নয়ন করা হবে। এসব স্পটের মধ্যে অর্ধশত জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ঘিরে বড় আকারের বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পর্যটন মহাপরিকল্পনায় গোটা দেশের পর্যটন গন্তব্যকে ১১টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে থাকছে উপকূল বা কোস্টাল, পাহাড়, বরেন্দ্র অঞ্চল, গারো, সমুদ্রসহ বিভিন্ন অঞ্চল। যেসব অঞ্চলে কোনো ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হবে তা চূড়ান্ত করা থাকবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহির মো. জাবের ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী মার্চের মধ্যে মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হচ্ছে। এরপর এটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় পর্যটন পরিষদে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী এর সভাপতি। এখান থেকে অনুমোদিত হলে এর বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক। এটি যাতে কাগুজে দলিল হিসেবে পড়ে না থাকে, এ জন্য আমরা এখন থেকেই অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি শুরু করে দিয়েছি, যাতে এটি অনুমোদন হওয়ার পরপরই আমরা এটি বাস্তবায়ন শুরু করে দিতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এক হাজার ৫১টি পর্যটন গন্তব্য চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ৫০টি স্পট ধরে বড় ধরনের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনা হবে। প্রথমে ৫০টি পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে আর্কিটেকচারাল প্ল্যান, স্ট্র্যাকচারাল প্ল্যান, ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান এবং ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান করা হবে। যেখানে সরকারি বিনিয়োগের দরকার হবে, তা সরকারিভাবে করা হবে। আর বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য এখানে প্রচুর বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বেসরকারি পর্যটন প্রতিষ্ঠান জার্নি প্লাসের নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও পাটা বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক রহমান বলেন, পর্যটন খাতের উন্নয়নে প্রায় তিরিশ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী তিরিশ বছরে বাংলাদেশের ট্যুরিজমের কী অবস্থা হবে এসব পরিকল্পনা মাথায় রেখেই এ উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ। স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি হবে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। পর্যটনও এর বাইরে নয়।
মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজের সঙ্গে যুক্ত এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, মহাপরিকল্পনার খসড়া মোটামুটি হয়ে গেছে। এখন সেটা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিভাগে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। খসড়াটি নিয়ে কারো কোনো যোগবিয়োগ আছে কীনা তা জানার জন্য। এসব কাজ চলবে এক মাসের মতো। এরপর জাতীয় কর্মশালা হবে, তারপরই চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ মহাপরিকল্পনা ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশই পর্যটন খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে পারেনি। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান না থাকার কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। যে টুকু হয়েছে, তা অপরিকল্পিতভাবে হয়েছে। তাই মাস্টারপ্ল্যান আরো ২০ বছর আগে হওয়া উচিত ছিল। তবে দেরিতে হলেও হচ্ছে। এখন সরকারের সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, মাস্টারপ্ল্যানের মধ্য দিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে পর্যটনের সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বদলে যাবে দেশের পর্যটন খাত। বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পের নতুন যুগে প্রবেশ করবে।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এ খাতের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে পর্যটন খাতের কোনো মহাপরিকল্পনা না থাকায় অপরিকল্পিতভাবে বিকশিত হয়েছে পর্যটন খাত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কক্সবাজারের মতো বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকতে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত অবকাঠামো। আবার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে হুমকিতে একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ অন্যান্য গন্তব্যগুলোয় নেই পর্যটক আকর্ষণের উপযোগী পরিবেশ। পর্যটন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পর্যটন খাতের সুষম বিকাশ সম্ভব বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।