০২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০২:৩৬:০০ অপরাহ্ন


যেকোনো সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক
ডেস্ক রিপোর্টার:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০১-২০২৩
যেকোনো সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক ফাইল ফটো


জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা এবং ডিজিটাল কার্যক্রমের উন্নয়ন-বাংলাদেশের সামনে এই দুই প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সফররত বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অ্যাপেল ভ্যান ট্রটসেনবাগ। বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কিছু সংকটও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তবে গত পাঁচ দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রশংসা করেছেন অ্যাপেল ভ্যান। বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে অংশিদারিত্ব চায় বিশ্বব্যাংক। করোনার মত সংকট কাল,খরা-বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোন সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক।

রোববার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশ নিয়ে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন অ্যাপেল ভ্যান। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশিদারিত্ব উদযাপন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষ্যেই বাংলাদেশ সফরে আসেন বিশ্বব্যাংকের এমডি। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত প্যানেল আলোচনা, ফটো প্রদর্শনী। দুপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিশ্বব্যাংকের এমডি। আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়া বিশ্বব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল কিনা-এ প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব দেন নি তিনি। তবে অ্যাপেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ বলেছেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ৩৬৫টি প্রকল্পে ৪০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র একটি প্রকল্প ঋণ সহায়তা থেকে বাদ পড়েছে। এটা হতেই পারে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কোন বিষয়ে একটা ছোট পরিবারের সবাইও একমত হতে পারেনা। বিষয়টি সেভাবেই দেখতে হবে। বরং উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়দী অংশিদারিত্ব চায় বিশ্বব্যাংক। এটাই সংস্থার উন্নয়ন নীতি। করোনার মতো সংকট কাল,খরা-বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোন সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্বব্যাংকের নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা আছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে সংস্থার এমডি বলেন, মানবেতর পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের সহায়তা বিশ্বব্যাংক এ পর্যন্ত ৬০ কোটি ডলারের অনুদান দিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাবেন তিনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আরও কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায় সে চেষ্টা করছেন তারা। তবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাবেন বিশ্বব্যাংক সেটাই আশা করে।
বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেওয়ার বিশ্বব্যাংকের নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা আছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে অ্যাপেল ভ্যান বলেন,কোন দেশ নিয়েই সংস্থার এ ধরনের কোন পরিকল্পনা থাকেনা। সব উন্নয়নশীল দেশের অর্থচাহিদা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বরং আপতকালীন সংকটেই বেশি সহায়তা দিয়ে থাকে। এটাই বেশি কার্যকর। করোনা এক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কোন খাতে অর্থায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেনা বিশ্বব্যাংক। এক্ষেত্রে সামস্টিক অর্থনীতিতে বৈষম্য হ্রাসে যেখানে প্রয়োজন বিনিয়োগ করা হয়। মানব সম্পদ. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে অগ্রাধিকারভিত্তিক এবং বড় অংকের স্থায়ী অর্থায়ন প্রয়োজন।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক উৎসের ঋণে বাংলাদেশকে অন্তত ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হবে। ঋণ পরিশোধ নিয়ে কিছুট চাপে রয়েছে বাংলাদেশ।সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের নমনীয় সুদে ঋণের সুযোগ আছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে এমডি বলেন, না এধরনের কোন সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট কোন দেশের জন্য আলাদা সুযোগ নেই। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) সদস্য ৭৫ দেশের মধ্যে ৬৫টি এলডিসি এ মুহুর্তে ঋণ পরিশোধে চাপে রয়েছে।
শিক্ষা খাতে কোন আপোষ নয়: বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ অংশিদারিত্ব নিয়ে প্যানেল আলোচনায় অ্যাপেল ভ্যান বলেন, শিক্ষা খাতের উন্নয়নে কোন আপোষ নয়। এ খাতে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য। শিক্ষা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতে বড় অংকের বিনিয়োগ না হলে সব সংকটই দীর্ঘ মেয়াদে থেকে যাবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর এবং কোরিয়া কি ধরনের মডেল নিয়েছে সেখান থেকে বাংলাদেশের কি শিক্ষনীয় রয়েছে সে বিষয়ে বাংলাদেশকে নীতি কৌশল নিতে হবে। প্যানেল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায় কাউস, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইস মনসুর, বিল্ডের চেয়ারপার্সন ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মাল্টিলেটারেল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারেন্টি এজেন্সির (মিগা) ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনায়েদ কামাল।
বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অবদান আছে -অর্থমন্ত্রী: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক সঙ্গে ছিল। এ দেশের উন্নয়নে সংস্থার অবদান আছে। মোট দেশজ উৎপাদন, মাথা পিছ আয়, গড় আয়ু ও দারিদ্র্য হ্রাস ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে গত পাঁচ দশকের সাফল্যের তথ্য তুলে ধরেন তিনি। উন্নয়নে আগামী লক্ষ্য অর্জনেও বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা চান তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংকের সদস্য হয় বাংলাদেশ। ওই বছরের নভেম্বরে যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশের পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি ও শিল্পের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণ ও বিদ্যুৎ খাতের সহায়তায় ৫ কোটি ডলারের জরুরি পুনরুদ্ধার ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের পথচলা শুরু হয়। এ পর্যন্ত ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেয় বিশ্বব্যাংক। মোট ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি রয়েছে সংস্থার।