০২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ১২:২৫:২০ অপরাহ্ন


৬৫ বয়সোর্ধ্বদের পাসপোর্ট নিয়মে পরিবর্তন আসছে
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০১-২০২৩
৬৫ বয়সোর্ধ্বদের পাসপোর্ট নিয়মে পরিবর্তন আসছে ফাইল ফটো


বয়স ৬৫ বা এর বেশি হলে ৫ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট দেয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার যেন শেষ নেই। অন্যরা ১০ বছরের পাসপোর্ট পেলেও তাদের কেন ৫ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে সেটিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। এক্ষেত্রে অনেকে এই বয়সি মানুষদের আয়ু ফুরিয়ে আসার ব্যাখ্যাও দাঁড় করিয়েছেন। তবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরেও অনেকে পরিষ্কার নন কেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশভেদে ১৮ বছরের নিচে ৫ বছরের নিয়ম থাকলেও ৬৫ বছরের পরে পাসপোর্ট অফিসের ঝামেলা সামলানো কষ্টসাধ্য বলে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

এই সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। ৬৫ বয়সোর্ধ্বদের পাসপোর্টের মেয়াদসীমা অন্যদের মতো ১০ বছর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৫ বছরের মেয়াদসীমা উঠিয়ে ১০ বছর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হতে পারে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়ন করে ই-পাসপোর্ট নেয়ার সময় হয়েছিল রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা কাজী রফিকের। ই-পাসপোর্ট ১০ বছর মেয়াদে নিতে চেয়েছিলেন যেন ৫ বছর পর আবার পাসপোর্টের ঝক্কিটা পোহাতে না হয়।
তবে আবেদন করতে গিয়ে আশাভঙ্গ হয় তার। কারণ তার বয়স ৬৫ পার হয়ে গেছে এবং চাইলেও তিনি ১০ বছর মেয়াদের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। পরিবারের অন্য সব সদস্য ১০ বছরের জন্য পারলেও তার পাসপোর্টের মেয়াদ হয় ৫ বছর। এমনকি তার সঙ্গে এলাকার ছোটভাই ১০ বছর মেয়াদে পেয়ে যান শুধু বয়স ৬৫ এর একটু কম হওয়ার কারণে। বিষয়টা আপত্তিকর ঠেকে তার কাছে এবং এ নিয়ে খুব আহত বোধ করেন তিনি।

কাজী রফিক জানান, আমাদেরকে কেন এ রকম করবে? বোঝা গেল এর বেশি বোধহয় আর বাঁচবে না’ এমন মানসিকতা থেকে কাজটি করা হয়েছে।

ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাদাত হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে আবহাওয়াজনিত কারণে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চামড়া কুঁচকে যায়, হাতের রেখা কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে আসে। তাই আগের নেয়া বায়োমেট্রিক পুরোপুরি ঠিকভাবে কাজ করে না। এমনকি সেটা অস্পষ্ট হতে পারে, রিড করতে একটু সমস্যা হতে পারে। এছাড়া বায়োমেট্রিক যাচাই করা প্রয়োজন হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জালিয়াতির আশঙ্কাও থেকে যায়। তাই সেদিক থেকে এখন সবকিছু ডিজিটাল হওয়ায় ইমিগ্রেশনের ডিভাইসে শনাক্ত করতে সমস্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি শিগগিরই এর একটি সমাধান আসবে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা আইকাওতেও উল্লেখ নেই এমন কোনো নিয়মের। দেশভেদে ১৮ বছরের নিচে ৫ বছরের নিয়ম থাকলেও বিশেষভাবে বেশি বয়সে কম মেয়াদ দেয়ার নজির তেমন দেখা যায় না। যেমন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নেই এমন নিয়ম। বরং ৭০ বছর বয়সে গিয়ে দেশের পাসপোর্ট অফিসের ঝামেলা মোকাবিলা করাটা কষ্টকর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে ১৮ বছরের কম বয়স হলে তার শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বৃদ্ধি বেড়ে যায়। এ নিয়ম তাদের জন্য ঠিক আছে। তবে পরিবারে ৬৫ এর বেশি বয়সিদের জন্য ১০ বছর করলে অবশ্যই বিষয়টি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, যদি বায়োমেট্রিকের যুক্তিতে এমন হয়ে থাকে তাহলে সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত, যাতে কেউ এটাকে বৈষম্যমূলক মনে না করে। তবে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের ক্ষেত্রে এমন ব্যতিক্রমের সমস্যা বুঝতে পেরেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।

উল্লেখ্য, ই-পাসপোর্টের যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে। এরপর থেকে অনেককেই যেতে হয়েছে এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে। ১৮ বছরের কম বা ৬৫ বছরের বেশি হলে ৫ বছর মেয়াদেই নিতে হচ্ছে পাসপোর্ট। তবে এর কারণ উল্লেখ বা ব্যাখ্যা নেই কোথাও।