বাংলাদেশে প্রথম যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মেরিনা খাতুন। সোমবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মেরিনা খাতুনকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃত প্রদানের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এরপর যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনকে স্বীকৃতি দিয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে।
এর আগে তাড়াশের বীরঙ্গানা পচি বেওয়ার (মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত) কন্যা মেরিনা খাতুন যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য ২০২২ সালের সেপ্টম্বর মাসের ৮ তারিখে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ৮২তম সভায় মন্ত্রী বিষয়টি উত্থাপন করেন। সেখানে যুদ্ধশিশু হিসেবে মেরিনা খাতুনকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকাররা তাড়াশের উত্তর পাড়ার মৃত ফাজিল আকন্দের বিধবা স্ত্রী পচি বেওয়াকে (বর্তমানে মৃত) বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় পাক বাহিনীর সামরিক ক্যাম্পে। তারপর সেখানে তারা ওই বীরাঙ্গনার ওপর পাশবিক, শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন চালায়। আর পাক-হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের ফলে জন্ম হয় যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের।
অবশ্য, ২০১৮ সালে পচি বেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়ে গেজেটভুক্ত হয়েছেন।
দেশের প্রথম যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া প্রসঙ্গে সোমবার দুপুরে মেরিনা খাতুন সমকালকে বলেন, ‘আমাকে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত সম্বলিত পত্র হাতে পেয়েছি। এতে আমি আনন্দিত। পাশাপাশি, মুক্তিযোদ্ধাদের মতো যুদ্ধশিশুদের আর্থিকভাবে সম্মানী দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, তাড়াশের যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনকে নিয়ে গত বছরের ১৮ অক্টোবর সমকালে ‘রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অপেক্ষায় যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও যুদ্ধশিশু মেরিনা ও তার বীরঙ্গানা মা পচি বেওয়াকে নিয়ে বিগত বছরগুলোতে সমকালে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।