২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৪:৪০:৩৪ পূর্বাহ্ন


টেকসই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৬ দফা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০১-২০২৩
টেকসই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৬ দফা ফাইল ফটো


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি২০ জোটের সামনে ছয়টি প্রস্তাব রেখে বলেছেন, টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং গ্লোবাল সাউথের (উন্নয়নশীল বিশ্ব) উন্নয়নের জন্য এগুলো সম্মিলিতভাবে সমাধান করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কভিড মহামারি) বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।

নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগদান করে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের একটি দেশ, ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণার আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জি২০-এর প্রেসিডেন্ট ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানায়। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং একটি উন্নত বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করি।’

টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রথম প্রস্তাবে বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন, যা এসডিজির সমান্তরালে সামগ্রিকভাবে বৈষম্য মোকাবেলা করবে।

তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়নের প্রয়োজন—দেশগুলোর উত্তরণের সময় এটি পূরণ করতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী নারীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইডস’ এড়িয়ে সেতুবন্ধ গড়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর পঞ্চম প্রস্তাবে বলেন, সব মানুষেরই ভালোভাবে জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যেন বিশ্বসম্প্রদায় ভুলে না যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ষষ্ঠ ও শেষ প্রস্তাবে বলেন, বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, এখানে, অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের কাছ থেকে সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে যুক্ত করে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বস্তরে সাহসী, দৃঢ় ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া প্রথম ভাষণ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা আছে...বিশ্বের প্রতিটি ব্যক্তির নিজের ও পরিবারের পর্যাপ্ত মানসম্মত স্বাস্থ্য ও সুস্থতার অধিকার নিশ্চিত করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার এই দৃষ্টিভঙ্গি আজও প্রাসঙ্গিক। এই চেতনাকে সামনে রেখে, আমরা কেন্দ্রে মানুষের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’ তিনি আরো বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে স্বীকৃত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে বাংলাদেশ জিডিপির দিক থেকে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাত্র এক দশকে মাথাপিছু আয় তিন গুণ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি স্তর থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য সব শর্ত পূরণ করেছে। তিনি বলেন, ‘এটি সন্তোষজনক যে বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম সেরা কভিড প্রতরোধী দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পারফরমার হিসেবে স্থান পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটি শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে উন্নত ভৌত অবকাঠামো দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যাচ্ছি।’