২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:৪১:৩৮ অপরাহ্ন


কূটনীতিকদের প্রতি কঠোর বার্তা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১২-২০২২
কূটনীতিকদের প্রতি কঠোর বার্তা কূটনীতিকদের প্রতি কঠোর বার্তা


বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। বাংলাদেশে কর্মরত রাষ্ট্রদূতদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ও জোটকে সতর্কভাবে বক্তব্য-বিবৃতি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা এ সময় যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সেসব দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন।

শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপ-কমিটির প্রস্তুতি সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'এত বড় বড় কথা বলেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত! বন্ধুত্বটা নষ্ট করবেন না। আমরা বন্ধুত্ব চাই। অতীতে '৭৫, '৭১-এর মতো অনেক বেদনা আছে। তারপরও আমরা বন্ধুত্ব চাই। এভাবে করলে বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে। সেটায় কারও লাভ নাই।' ওবায়দুল কাদের বলেন, '৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের চেহারা, গণতন্ত্রের অবস্থা আমরা দেখেছি। তাদের নির্বাচন একপক্ষ মেনে নেয়নি, রেজাল্ট মেনে নেয়নি। ফলস প্র্যাকটিস নাকি হয়েছে। নির্বাচনী জালিয়াতি বাংলাদেশে শুধু বলা হয় না, এসব শব্দ আমেরিকাও ব্যবহার হচ্ছে। সে সময় পাঁচজন মানুষ মারা গেছে। কংগ্রেস আক্রান্ত হয়। ন্যান্সি পেলোসি কীভাবে লুকিয়ে ছিল সেই দৃশ্য আমরা দেখেছি।' আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কূটনীতিকদের সতর্ক করে বলেন, 'অহেতুক কেন এসব কথা বলছেন? ডেইলি মেস শুট (নির্বিচারে গুলি) হচ্ছে, সপ্তাহে অন্তত দুইটা। একেকটাতে পাঁচজন, ১০ জন।

১৯টি শিশু একটা মেস শুটে মারা গেছে। আপনারা মানবাধিকারের কথা বলেন। আর পুলিশকে সেখানে ধরা হয়েছে তারা যথাসময়ে সিকিউরিটি দেয়নি। দিলে এই ঘটনা ঘটত না। সিকিউরিটি অনুপস্থিত। আমাদের আদালতপাড়া নিয়ে কথা বলেন। আপনাদের ওখানে কী হচ্ছে? সবাই নিজের চেহারাটা আগে দেখুক।' ওবায়দুল কাদের বলেন, 'অবাক হয়েছি। কাল মিডিয়ায় দেখলাম জার্মানিতে অভু্যত্থানের চেষ্টা করছে। কু্য করছে। কাজে কারোরই ভেতরের খবর অত সুখকর নয়। যুক্তরাজ্যে কয়বার চেঞ্জ হলো? প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হলো, ডেভিড ক্যামেরন, টেরেসা মে, তারপর বরিস জনসন, লিজ ট্রাস এলো, এখন ঋষি সুনাক। তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। আমরা সেই তুলনায় অনেক ভালো আছি। সো কেউ ইন্টারফেয়ার করার দরকার নেই। আপনাদের এত কিছু হচ্ছে আমরা তো ইন্টারফেয়ার করিনি।' একই সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, 'কূটনীতিকরা একটা সাইডে মোটিভেটেড হয়ে আছে। ঘটনা ঘটার আগেই তারা একটা বিবৃতি দেয়। আমি দেখেছি, পুলিশের রক্ত ঝরছে, টেলিভিশনেই দেখা গেছে। সেটার বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। তাদের বক্তব্য এমনভাবে আসছে যে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, 'আমেরিকার নির্বাচনের সময়ও অনেক গন্ডগোল হয়েছে, আমরা নাক গলিয়েছি? আমার দেশের রাজনীতি নিয়ে দয়া করে নাক গলাবেন না। আমার দেশের রাজনীতি আমার দেশের জনগণই নির্ধারণ করবে।' নির্বাচন সংবিধান অনুসারে হবে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'সংবিধানের বাইরে নির্বাচন হবে না। এখন তারা একটা কথা বলে, এখানে বসে যাবে, ওখানে বসে যাবে, অমুককে টেনে নামাবে, এসব কথার ভেতর আমরা থাকব না।' একইদিন বিকালে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করে বলেছেন, 'কানাডার আদালত বলেছে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। বিএনপির কোনো সদস্যকে কানাডায় আশ্রয় দিতে পারি না। বৃহস্পতিবার সে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে একজন রাষ্ট্রদূত বিবৃতি দিয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করি রাষ্ট্রদূতকে, কোন কূটনৈতিক আচার আচরণে, রীতিনীতিতে আপনারা একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিবৃতি দিলেন? এটি আপনারা দিতে পারেন না। এ ধরনের বিবৃতি ভবিষ্যতে দেবেন না।' এদিকে, শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'মার্কিন রাষ্ট্রদূত ৭ তারিখের ঘটনা নিয়ে তদন্তের কথা বলেছেন। অবশ্যই তদন্ত হবে। পুলিশ তো বিএনপি অফিসে বোমা পেয়েছে। কারা বোমা রেখেছিল, কারা বোমা বানিয়েছিল, বানানোর টাকা কারা দিয়েছিল, পুলিশের ওপর কীভাবে হামলা করেছিল- এগুলো তদন্তে বেরিয়ে আসবে, পুলিশের কোনো ভুল থাকলে সেটাও তদন্তে বেরিয়ে অসবে।

সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নিশ্চিত করেছে, সেই কারণেই বিএনপি সারা দেশে নয়টি বড় সমাবেশ করতে পেরেছে এবং ঢাকায়ও যাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারে সে জন্য সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়াও বিকল্প চারটি প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পার্টি অফিসে বোমা রাখা, পুলিশের ওপর ইটপাটকেল মারা, হামলা করা, বেআইনিভাবে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা এগুলো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়।' যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, 'সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে হামলা করেছিল। সেটি যেমন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সেটার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে যেমন তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং করছে, মামলাও পরিচালিত হচ্ছে, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে, এখানেও ৭ তারিখের ঘটনা তার সঙ্গে তুলনীয় যে এটাও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ।' রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনা তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্র হাইকমিশনার আহ্বান জানিয়েছিল। একই সঙ্গে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চেয়ে ১৪টি দেশ ও ইইউ বিবৃতি দেয়।