২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:৩২:৩৪ অপরাহ্ন


সবখানেই যেন টাকাওয়ালাদের জয়জয়কার: রাষ্ট্রপতি
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১২-২০২২
সবখানেই যেন টাকাওয়ালাদের জয়জয়কার: রাষ্ট্রপতি সবখানেই যেন টাকাওয়ালাদের জয়জয়কার: রাষ্ট্রপতি


রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, একটা সময় ছিল ঘুসখোর, সুদখোর ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন শহর, নগর ও গ্রামসহ সবখানেই যেন টাকাওয়ালাদের জয়জয়কার। অথচ সেই টাকা কীভাবে এলো, সৎ পথে নাকি অসৎ পথে এসব নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের নয়, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। দুর্নীতি সমাজে বৈষম্য তৈরি করে। বিকাশ ও উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। আমি মনে করি, মানুষের মধ্যে দুর্নীতিবিষয়ক সচেতনতা তৈরি ও দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই।

টাকা সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি হয়ে ওঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ, চাকরিজীবী, পেশাজীবী, কৃষক ও শ্রমিকরা সবাই যেন টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছে। টাকা কীভাবে এলো সৎ পথে নাকি অসৎ পথে এসব নিয়ে ভাববার কারও ফুসরত নেই।

আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা বাস্তবায়ন দেশের সমৃদ্ধি এনে দেবে। দুর্নীতিবাজকে সহায়তা করাও দুর্নীতি। দুর্নীতি দূর করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

ছোট বা বড় সব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে একই শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয়, সমাজে এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্নীতি দমনে দুদক কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করতে হবে। সর্সের ভিতর ভূত যেন না থাকে, তাহলে দুদক জনগণের কাছে আস্থা হারাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, দুর্নীতি হচ্ছে সামগ্রিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, যা একটি জাতির আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, পৃথিবীতে মানুষের অনেক চাহিদা থাকতে পারে, ধনের লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। আবার জ্ঞানের প্রতি লোভ-লালসা অমানুষকে মানুষে পরিণত করে। কোনো ব্যক্তি দুর্নীতিবাজ হয়ে জন্মায় না, পরবর্তীকালে তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারে যুব সমাজ। দুর্নীতিবিরোধী আইনের যথাযথ ও নিরপেক্ষ ব্যবহার এবং প্রয়োগ, একই সঙ্গে অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক সময়োপযোগী আইনি ব্যবস্থায় দুর্নীতিমুক্ত হতে পারে দেশ। যত কঠিনই হোক দুর্নীতিকে শনাক্ত করতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও সমাজ-রাষ্ট্রে দুর্নীতি বিরাজমান। এতে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষ অভাবে নয় বরং লোভ ও স্বভাগতভাবেই দুর্নীতি করে থাকে। যারা দুর্নীতি করে তাদের মধ্যে কোনো দেশপ্রেম আছে বলে দুদক মনে করে না। সামান্যতম দেশপ্রেম থাকলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয়।

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় না, দেশকে পিছিয়ে নেওয়া যায়। যারা দেশকে পিছিয়ে নেওয়ার কাজে জড়িত তারা কীভাবে দেশপ্রেমিক হতে পারেন। একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই দুর্নীতিবাজ। একসময় দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে সমাজে বয়কট করা হতো। কিন্তু এখন মানুষের মর্যাদা নিরূপন হয় অর্থের মাপকাঠিতে। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে ‘দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না’- এমন ধারণা সৃষ্টি করতে হবে।

এ লক্ষ্যে দুদক দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলায় সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৫০২টি কমিটি করে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

দুর্নীতিবাজরা কৌশলী হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে দুদক প্রশিক্ষত জনবল ও প্রযুক্তিনির্ভর তদন্তে গুরুত্ব আরোপ করেছে।