২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:৫১:৪৩ অপরাহ্ন


পতিত জমি খুঁজতে আট কমিটি
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১২-২০২২
পতিত জমি খুঁজতে আট কমিটি পতিত জমি খুঁজতে আট কমিটি


দেশের আবাদযোগ্য কোনো জমি অনাবাদি বা পতিত রাখা যাবে না, দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে হবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশের পর অনাবাদি পতিত জমি চিহ্নিত করে চাষাবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে দেশের আট বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই আট কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ বিভাগের অনাবাদি পতিত জমি চিহ্নিত করে চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য সুপারিশ-সংবলিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন। তাদের প্রতিবেদন ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হবে। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত চিঠি সব বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

১৭ নভেম্বর কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় টেকসই খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে বোরো মৌসুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যার যেখানে যতটুকু জমি ও জলাধার আছে, সেখানে যেন কিছু না কিছু উৎপাদন করা হয়। সবচেয়ে বড় কথা, খাদ্য সংকটের বিষয়টা বেশি বিবেচনা করা দরকার। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আমরা সেদিকে লক্ষ রেখেই বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে কৃষি মন্ত্রণালয় নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর ‘কোনো জমি যেন পতিত না থাকে,’ এর আলোকে সারা দেশের অনাবাদি পতিত জমি চিহ্নিতকরণ ও চাষাবাদের আওতায় আনতে দেশের আট বিভাগে আটটি কমিটি গঠন করা হয়। বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন এলজিইডির একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চল/বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একজন অতিরিক্ত পরিচালক। কমিটি কৃষি মন্ত্রণালয়ে তাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে সুপারিশ জমা দেবে।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা প্রতি বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। তারা অলরেডি কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশের অনাবাদি পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে শিল্পমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীকে আধা-সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। নবগঠিত কমিটি নিজ নিজ বিভাগের আবাদযোগ্য পতিত জমি চিহ্নিত করে তা চাষাবাদের আওতায় আনার কৌশলসহ সুপারিশ-সংবলিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে আমাদের কাছে জমা দেবে। সেই প্রতিবেদনের আলোকে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পত্র দেব।’ জানা গেছে, করোনা-পরবর্তী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছে সরকার। সংকট মোকাবিলায় দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও আবাদযোগ্য কৃষিজমি পতিত না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১১ কোটি শতক পতিত বা অনাবাদি জমি রয়েছে, যা মোট জমির প্রায় ৫ শতাংশ। পতিত এসব জমি আবাদের জন্য ইতোমধ্যে একাধিক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে।’ প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলের চাষযোগ্য পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের সহযোগিতা চেয়ে আধা-সরকারি পত্র দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক। তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ কামনা করে কৃষিমন্ত্রী চিঠিতে বলেন, বৈশ্বিক প্রতিকূল অবস্থায় সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমিতে খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ডাল ও তেলবীজ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান, চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলপথের অব্যবহৃত বা পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করলে তা দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। আবাদের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অফিসার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিসটিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ২২৬ কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার একর। পরিবারপ্রতি জমির পরিমাণ প্রায় ৮২ শতক। এসব জমির মধ্যে বসতবাড়ি, পুকুর, স্থায়ী ফসলি জমি, অস্থায়ী ফসলি জমির পাশাপাশি পতিত জমিও রয়েছে। এর মধ্যে দুই ধরনের অর্থাৎ অস্থায়ী পতিত ও স্থায়ী পতিত জমি রয়েছে। কখনোই কোনো ধরনের আবাদ ও শস্য উৎপাদন হয়নি এমন জমিকে বলা হয় স্থায়ী পতিত জমি, দেশে যার পরিমাণ প্রায় ৯ কোটি ৩১ লাখ ৫৯ হাজার একর। পরিবারপ্রতি এ ধরনের পতিত জমি রয়েছে গড়ে প্রায় তিন শতক। বছরের পর বছর এসব জমি পতিত পড়ে থাকছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পতিত জমির বেশির ভাগ মালিক এসব জমির কাছাকাছি বসবাস করেন না। তারা চাকরির কারণে হোক আর ব্যবসার কারণেই হোক, নিজের বসতবাড়ি বা নিজের মালিকানাধীন জমি থেকে দূরে বসবাস করেন। ফলে এসব জমির বেশির ভাগই সারা বছর অনাবাদি রয়ে যায়। কিছু জমিতে মাঝে-মধ্যে চাষাবাদ হলেও তা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।