প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার বিকেলে চট্টগ্রামের পোলো গ্রাউন্ডে চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে পোলো গ্রাউন্ডে বিপুল মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই লাখো মানুষ উপস্থিত হয় জনসভাস্থলে। প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন। শুরুতে তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। চট্টগ্রামে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাকে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীরা যেন আর এ দেশে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫০ মিনিটের বক্তব্যের বড় অংশজুড়ে ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের উন্নয়ন, বিএনপির আন্দোলনে সহিংসতা, বিএনপি আমলের দুর্নীতি, দেশের রিজার্ভ, বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট, চট্টগ্রামের উন্নয়ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই এ দেশের উন্নয়ন অব্যাহত আছে। আজ আমি আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। ২৯টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি, ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। বিজয়ের মাসে বীর চট্টলাবাসীর জন্য এগুলো আমার উপহার। ’
বিএনপির দুই গুণ—ভোট চুরি ও মানুষ খুন : বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাদের আন্দোলন হলো মানুষ হত্যা করা। বিএনপির দুটি গুণ আছে—ভোট চুরি আর মানুষ খুন, ওইটাই তারা পারে। তারা জানে নির্বাচন হলে জনগণ ওই খুনিদের ভোট দেবে না।
মানুষ পুড়িয়ে মারার হিসাব দিতে হবে : বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখনো ওই খুনিদের সঙ্গে তাদের সখ্য আছে। খুনি, দুর্নীতিবাজ—এরাই বিএনপির সঙ্গে চলে। ২০১৩-১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে যেসব মানুষকে হত্যা করেছে তাদের পরিবার আজ ধ্বংসের পথে। এর জবাব একদিন খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াকে দিতে হবে।
প্রতিশ্রুতি দিন, নৌকায় ভোট দেবেন : জনসভায় সমবেতদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চাই। কারণ, যাতে যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। ’
বক্তব্যের শেষের দিকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাওয়ার আগে আমি আপনাদের কাছে একটি প্রতিশ্রুতি চাই যে আপনারা অতীতের মতো আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দেবেন এবং আমাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। হাত তুলে বলুন, আপনি নৌকায় ভোট দেবেন। ’ এ সময়ে সমবেতরা হাত তুলে সম্মতি জানায়।
বিএনপি ধ্বংস করে, আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে : বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা ধ্বংস করে, আমরা সৃষ্টি করি। ওরা ক্ষতি করে, আমরা মানুষের মঙ্গল করি। এটাই হলো বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির তফাত। ওদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী, খুনি, আর আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে তাদের সঙ্গে আছি। আমরা শান্তি চাই। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, দেশের উন্নয়নে বিশ্বাস করি। ’
১০ ডিসেম্বর বিএনপির প্রিয় তারিখ : ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের আগে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে। তারা ১০ ডিসেম্বর ইত্তেফাকের সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে তুলে নিয়ে যায়। এ রকম অনেককেই তারা ১০ ডিসেম্বর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করেছিল। বাংলাদেশ যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য তারা এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় একটা তারিখ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি সাশ্রয়ী হতে হবে : দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ নিয়ে কিছুদিন কষ্ট হয়েছিল। ভবিষ্যতে আর হবে না ইনশাআল্লাহ। তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের সব রকম সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব, কিন্তু আপনাদের সহযোগিতা চাই। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। যার যতটুকু জমি আছে ফেলে রাখবেন না। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। আমরা দেশের মানুষকে না খেয়ে মারা যেতে দেব না। আমরা গবেষণা করে ফলমূল, খাদ্যশস্য উৎপাদন করছি। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে খাদ্য এনে রাখছি। ’
‘বিদেশে বসে দেশে নাশকতা পরিচালনা করে তারেক’ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে কারাগারে। তার এক ছেলে মারা গেছে। সে বিদেশে টাকা পাচার করেছিল। আমরা সিঙ্গাপুর থেকে সেই টাকার কিছুটা ফিরিয়ে এনেছি। আরেকজন এখন লন্ডনে বসে আছে। মুচলেকা দিয়ে সে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। সেখানে বসে দেশের ভেতরে যত বোমাবাজি, নাশকতা—সেগুলো পরিচালনা করে। ’
মানুষের সর্বনাশ করাই কি বিএনপি-জামায়াতের কাজ : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার আছে। একটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি আমরা। আর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ায়। বলে, ব্যাংকে নাকি টাকা নাই। ব্যাংকে যারা টাকা তুলতে গেছে, সবাই তো টাকা তুলতে পেরেছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গুজব রটানোর কারণে অনেকে বিভ্রান্ত হয়। অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনেছে। বাসা থেকে চুরি হয়ে গেছে। মানুষের সর্বনাশ করা, এটাই কি বিএনপি-জামায়াত শিবিরের কাজ?’
আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।