স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে।
মঙ্গলবার ( ২৯ অক্টোবর) সকালে কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে ৬০তম ব্যাচ কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স-এর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি খোলা জিপে চড়ে প্যারেডস্থল পরিদর্শন এবং মার্চপাস্ট উপভোগ করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় কারা উপ-মহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হক, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার মো. আমিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, কারাবন্দিদের সংশোধনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে কারা আইনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কারাগার ও সংশোধন মূলক পরিষেবা আইন- ২০২১ প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কারাগারের বন্দি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণার্থে বিভিন্ন মেয়াদী ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং আরও কয়েকটি নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কারাগারে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগস্থ ৩২টি কারাগারে বিভিন্ন নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল কারাগারে নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, কারাগারে আটক বন্দিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশ ও বিদেশের শ্রম বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের ৩৮টি কারাগারে যুগোপযোগী ৩৯টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল কারাগারকে এ প্রশিক্ষণের আওতায় আনয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
কারাগারে আটক কয়েদি বন্দিদের শ্রমে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর বিক্রয় লব্ধ অর্থ হতে শতকরা ৫০ ভাগ লভ্যাংশ বন্দিদের মজুরি হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে। যা বন্দিরা তাদের পরিবারের কাছে প্রেরণ করতে পারছেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, কারাগার একটি সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে কর্তব্য পালন করতে হয়। কারাগারের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অপরাধীদের চরিত্র সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আর এ ধরনের উদ্যোগকে সফল করতে হলে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শারীরিক উৎকর্ষ ও কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের আন্তরকিতায় রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে, যা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সমাপ্ত হবে। এছাড়াও ঢাকার কেরানীগঞ্জে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি” নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
পুলিশের হাত থেকে আসামি ছিনতাইয়ের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটা অস্বীকার করার কিছুই নেই, তারা দীর্ঘদিন ধরে একটা পরিকল্পনা করেই ওই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে। যেখানে আমাদের দুর্বলতা ছিল। সেই দুর্বলতার ফাঁক ফোঁকর দিয়েই তারা বেরিয়ে গেছে। এ দুর্বলতাটা কে তৈরি করেছিল, কারা এজন্য দায়ী, কারা এই সুযোগ-সুবিধা ওভারলুক করেছে কিংবা কার গাফিলতি আছে, সেগুলোর জন্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদন আমাদের কাছে এখনো পৌঁছেনি। তদন্ত রিপোর্ট আসলে সে অনুযায়ী, আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে জঙ্গিরা থাকে। এ জঙ্গিদের নিয়ে আপনারা যেমন উদ্বিগ্ন, আমরাও তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখানেও কারো কোন রকম গ্যাপ আছে কিনা তাও আমরা খতিয়ে দেখছি, আইজি প্রিজনও এ কারাগারে এসে পরিদর্শন করে খতিয়ে দেখছেন যে, এখানকার কোন গ্যাপ আছে কি-না বা কোন গাফিলতি-দুর্বলতা আছে কিনা। এক্ষেত্রেও কারো যদি গাফিলতি দুর্বলতা পাওয়া যায় সে অনুযায়ী, আমরা তাদের বিচারের আওতায় আনবো।
তিনি কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কারাগার থেকে আসামি স্থানান্তরের সময় অধিকতর সতর্কতা আবলম্বন করবেন। শৃঙ্খলা ও মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করবেন। কারাভ্যন্তরে বিধি বহির্ভূত নিষিদ্ধ দ্রব্য প্রবেশ করতে না পারে সে দিকে আপনাদের সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
ছয় মাস মেয়াদি ৬০তম ব্যাচ কারারক্ষীদের এ প্রশিক্ষণ কোর্সে ৩০১ জন কারারক্ষী অংশগ্রহণ করেন। গত ২৯ মে এ প্রশিক্ষণ শুরু হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে নবীন কারারক্ষীদের মধ্য থেকে বেস্ট ড্রিলে-১ম নরসিংদী জেলা কারাগারের রনি দেওয়ান, পিটিতে-১ম খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের মো. রবিউল ইসলাম, বেস্ট ফায়ারারে মেহেরপুর জেলা কারাগারের মো. ইমানুর রহমান ও সর্ববিষয়ে চৌকষ ক্যাটাগরিতে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের নবীন কারারক্ষী মিন্টু ঘোষকে কৃতি প্রশিক্ষণার্থীর পুরস্কার দেয়া হয়।