ঢাকা, ১৭ নভেম্বর – শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন ও হয়রানি বন্ধ এবং বিমানবন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক বিশেষ বৈঠকে আটটি নির্দেশনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা মেনে চলতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ২১টি সংস্থাকে চিঠি দিয়েছেন বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ওই বৈঠক। এতে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে বিমানবন্দরের সব স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা; কাস্টমস হলের গ্রিন চ্যানেলে যাত্রা হয়রানি বন্ধ করা; লাগেজ ব্যবস্থাপনা বিমানবন্দরের যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন করা; বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের গাড়ি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যাত্রী হয়রানি বন্ধ; বিমানবন্দরের বাথরুমগুলো সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা; বহির্গামী ও বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সম্পাদন করা; সব জটিলতা পরিহার করে বহির্গামী ও বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ক্লিয়ারেন্স কার্যক্রম সহজীকরণ এবং এ সম্পর্কিত তথ্যাদি যাত্রীদের অবহিত করা। এসব সিদ্ধান্তের আলোকে বিস্তারিত ব্যাখাও দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিমানবন্দর ঘুরে বিদেশফেরত একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে হয়রানির নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা জানান, প্রবাস থেকে ফেরা প্রিয়জনদের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে স্বজনদের। সময় মতো বিমান অবতরণ করলেও, নানা জটিলতায় কারণে বের হতে তাদের সময় লাগছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। লাগেজগুলো বের হতেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। হয়রানি বন্ধে সরকার ও মাঠপর্যায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের জিএসই ও হ্যাংগার এলাকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে মেসার্স ক্রাউন এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়াটি চলতি সপ্তাহের মধ্যে শেষ করবে বিমান কর্তৃপক্ষ। যাত্রী সেবা দ্রুততর করার জন্য গ্রিন চ্যানেল-২ সার্বক্ষণিক চালু রাখার গুরুত্ব আলোচিত হয় সবশেষ সভায়। এটি চালু রাখতে অতিরিক্ত ৩০ জন জনবল প্রয়োজন বলে জানানো হয়। বর্তমানে জনবলের অভাবে সারাদিনে মাত্র তিন ঘণ্টা চালু রাখা হচ্ছে।
ইমিগ্রেশন এলাকায় সাইনেজ (দিকনির্দেশক চিহ্ন) বিশেষ করে বিজনেস ক্লাস লেখা সংবলিত সাইনেজ ইতোমধ্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ইমিগ্রেশন কাউন্টারগুলোয় নতুন করে স্টিকার প্রদর্শনের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীদের অ্যাম্বুলেন্সে কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়ার জন্য দ্রুততর সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক স্ট্রেচার সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু এটি নিশ্চিত না হওয়ায় ফের নির্দেশ প্রদান করা হয়। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এখনো স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিকিউর (এসওপি) জমা দেয়নি; তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এসওপি জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। বিমানবন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ডাক্তাররা সব সময় এপ্রোন এবং নেমট্যাগ পরে কর্মস্থলে ডিউটি করছেন মর্মে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান। এ ছাড়া নার্সরাও যেন তাদের ড্রেস পরে কর্মস্থলে ডিউটি করেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন সভাপতি।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।