২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৬:২৯:৪০ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশে তৈরি টি-শার্ট পরবেন ফিফা কর্মকর্তারা
অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১১-২০২২
বাংলাদেশে তৈরি টি-শার্ট পরবেন ফিফা কর্মকর্তারা বাংলাদেশে তৈরি টি-শার্ট পরবেন ফিফা কর্মকর্তারা


২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ ইউরোপের আটটি দেশের জন্য বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ জার্সি যায়। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ থেকে জার্সি যায়। এবারের কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ থেকে জার্সি যায়নি। গেছে ছয় লাখ ফিফার অফিশিয়াল টি-শার্ট। 

কাতার বিশ্বকাপের পোশাকপণ্য সরবরাহে অনেকের মতো ফিফার লাইসেন্স পেয়েছে রাশিয়ার মস্কোভিত্তিক ক্রীড়াসামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্পোর্টস মাস্টার। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে গোসাইলডাঙ্গার সনেট টেক্সটাইল লিমিটেড থেকে ওই ছয় লাখ টি-শার্ট নেয়। সব প্রক্রিয়া শেষে ফিফার অনুমোদনের পর এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দুই চালানে টি-শার্টগুলো রপ্তানি হয়।

ছয় লাখ টি-শার্টের রপ্তানি মূল্য ১৫ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে)।

জানা যায়, ফিফা কর্মকর্তা, রেফারি, বলবয় ও গ্যালারির অনেক দর্শকের পরনে থাকবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা এই টি-শার্ট।

সনেট টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইয়াছিন কালের কণ্ঠকে বলেন, আগের বিশ্বকাপে রাশিয়ায় বেশ কিছু জার্সি পাঠালেও এবার এটা দ্বিগুণ। তিনি বলেন, ১০ বছর ধরে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। তিনি জানান, সনেট টেক্সটাইল উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি করে থাকে। রাশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায় স্পোটর্সওয়্যার, জ্যাকেট, অন্তর্বাস রপ্তানি করে থাকে। শুধু রাশিয়ার বাজারেই বছরে ৭০ হাজার পিস পোশাক রপ্তানি করে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশে কেনাকাটায় ব্যস্ততা : প্রিয় দলের পতাকা ও জার্সি সংগ্রহ করার মিশনে নেমেছে সমর্থকরা। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার জার্সি ও পতাকার বাজার ঘিরে ক্রেতা-বিক্রেতার উচ্ছ্বাসে কমতি দেখা যাচ্ছে।

‘প্রিয় দলের পতাকা উড়াই। ভালো লাগে। তবে বাংলাদেশের পতাকা সবার ওপরে রাখি সব সময়। ’ কালের কণ্ঠকে বলছিলেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো. স্বাধীন। আর্জেন্টিনার পতাকা কিনতে এসেছেন গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর ফুটপাতে অবস্থিত পতাকার ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে। পাঁচ ফুটের একটি পতাকা ৮০ টাকা বললেও বিক্রেতা ৯০ টাকা চান। শেষ পর্যন্ত না কিনেই ফেরত যান তিনি।

গুলিস্তানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুটপাতে বিভিন্ন দলের পতাকা, জার্সি ও ব্যান্ড বিক্রি হচ্ছে। এই দোকানগুলো থেকে ক্রেতারা পাইকারি ও খুচরা দুইভাবেই কিনতে পারেন। আয়তনভেদে পতাকার দাম সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পাঁচ ফুট বাই তিন ফুট আয়তনের পতাকা। দাম দোকানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

বিক্রেতারা জানান, পতাকা বিক্রিতে বরাবরের মতো এবারও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর বাইরে জার্মানি, পর্তুগাল, ফ্রান্স, স্পেন ও সৌদি আরবের পতাকাও বিক্রি হচ্ছে কমবেশি। ৩২ দলের বিশ্বকাপের এই মঞ্চে বাংলাদেশ না থাকলেও পতাকা ঠিকই বিক্রি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

তবে এবার তুলনামূলকভাবে বিক্রি বেশ কম বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা। প্রায় ২২ বছর ধরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা বিক্রির সঙ্গে জড়িত কামাল। দীর্ঘদিন ধরে পতাকা বানানো ও ব্যবসায় জড়িত থাকায় তাঁর নাম হয়ে গেছে পতাকা কামাল। মেসার্স পতাকা কামালের স্বত্বাধিকারী কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৯ নভেম্বর আমি দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। অথচ গত বিশ্বকাপে এই সময়ে আমরা পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে দৈনিক পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। ’

পতাকা সেলিম প্রডাক্টসের বিক্রয়কর্মী পলাশ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্যান্যবার বিশ্বকাপ শুরুর দুই মাস আগে থেকে বেচাকেনা শুরু হলেও এবার এক সপ্তাহ আগেও তেমন বেচাকেনা হচ্ছে না। ’

পতাকা বিক্রেতারা এর কারণ হিসেবে করোনা মহামারির পর অর্থনৈতিক ধাক্কা, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়ার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসেন।

এদিকে গুলিস্তান সমবায় টুইন টাওয়ার স্পোর্টস মার্কেট, মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম মার্কেট এবং গুলিস্তান ও এর আশপাশের ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দলের জার্সি। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক ধরে জার্সির বাজার জমে উঠেছে। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় বিক্রি কম।

বিক্রেতারা জানান, দেশে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জার্সির চাহিদা দেশীয় উৎপাদন থেকেই মেটানো হয়। বাকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আমদানি করা হয়। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি থাকায় এবার দেশে জার্সির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আবার দেশে উৎপাদিত জার্সির কাপড়, স্টিকার ও অন্য সরঞ্জামসহ অনেক উপকরণই আসে বিদেশ থেকে। আমদানি বন্ধ থাকায় এবার সেসবও আসতে পারেনি যথেষ্ট পরিমাণে। উৎপাদন ও জোগান কমার ফলে জার্সির দাম এবার অন্যবারের তুলনায় বেশি।

মূলত চীন ও থাইল্যান্ড থেকে জার্সি আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতারা জানান, এক-দেড় মাস ধরে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ঋণপত্র বা এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) বন্ধ থাকায় আশানুরূপ জার্সি আমদানি করা যায়নি। অনেক বিক্রেতা জানিয়েছেন, তাঁদের ক্রয়াদেশ আটকে আছে চীনে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এলসি জট খুলে এসব জার্সি আসতে আসতে হয়তো বিশ্বকাপই শেষ হয়ে যাবে।

ফুটপাতের দোকানগুলোতে জার্সি মূলত ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটের ভেতরের দোকানগুলোতে মান অনুযায়ী বিভিন্ন জার্সির খুচরা দাম ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। গতবারের তুলনায় দেশি জার্সির দাম এবার গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং বিদেশি জার্সিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

গুলিস্তানের ফুটপাতের জার্সি বিক্রেতা মিজানুর রহমান বিশ্বকাপের বাজার বোঝাতে গিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বিশ্বকাপ হলে এ সময় আপনার সঙ্গে কথা বলার সময়ই পেতাম না। গতবার বিশ্বকাপ মৌসুমে ব্যবসা করে জায়গা কিনেছি, এবার চাল কিনতেই সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। ’

গুলিস্তান সমবায় টুইন টাওয়ার স্পোর্টস মার্কেটের ২৫০ থেকে ৩০০ দোকানে ক্রীড়াসামগ্রী ও জার্সি বিক্রি হয়। ফুটপাতের তুলনায় সেখানে কেনাবেচা একটু বেশি দেখা গেলেও ক্রেতা-বিক্রেতার হতাশা চোখ এড়ায়নি। পঞ্চগড়ের বাসিন্দা ব্রাজিলের সমর্থক মো. আতিকুর রহমান রাজা এসেছেন জার্সি কিনতে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এবার জার্সির দাম বেশি, উৎসবের আমেজ কম। ’

জার্সিসহ বিভিন্ন ক্রীড়াসামগ্রীর দোকান স্পোর্টস ভিশনের স্বত্বাধিকারী মো. কবির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ব্যাবসায়িক জীবনে এখন পর্যন্ত ছয়টা বিশ্বকাপের মৌসুম পার করেছি। এর মধ্যে এটাই সবচেয়ে খারাপ। ’ তিনি জানান, অন্যবার এ সময় দৈনিক ১০ লাখ টাকার জার্সি বিক্রি করতে পারলেও এবার তা এক লাখের বেশি হচ্ছে না।

আরেক বিক্রেতা আসাদুজ্জামান মিঠু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মানুষের এখন খাওয়া-পরার চাহিদাই পূরণ হচ্ছে না। বিনোদনের চিন্তা কিভাবে করবে?’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমারের ভক্ত। টঙ্গী থেকে এসেছেন মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম মার্কেটে ব্রাজিলের জার্সি কিনতে। অনেক দরদাম করে এক হাজার ২০০ টাকা দিয়ে ব্রাজিলের প্লেয়ার এডিসনের একটি জার্সি কিনলেও পুরোপুরি খুশি নন তিনি। একটু হতাশ কণ্ঠেই বললেন, ‘দামটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে এবার। ’

তবে বিশ্বকাপ যত ঘনিয়ে আসছে বিক্রি একটু একটু করে বাড়ছে বলে বিক্রেতারা জানান। হকি স্টেডিয়ামে অবস্থিত ক্রীড়াসামগ্রীর দোকান গ্যালাক্সি স্পোর্টসের কর্মচারী মো. জামিল হাসান মিন্টু কালের কণ্ঠকে জানান, জার্সি মূলত বিক্রি হয় বিশ্বকাপ শুরুর আগ পর্যন্ত। খেলা শুরুর পর বেচাকেনা ক্রমে কমে আসে। তিনি বলেন, ‘এবার ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই হতাশ। বেচাকেনা এখনো আশানুরূপ হচ্ছে না। ’