১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:২৫:২৫ অপরাহ্ন


জঙ্গি মোকাবিলায় আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন কারারক্ষীরা
অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১১-২০২২
জঙ্গি মোকাবিলায় আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন কারারক্ষীরা জঙ্গি মোকাবিলায় আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন কারারক্ষীরা


কারাগারে বন্দি জঙ্গিদের যেকোনও হামলা মোকাবিলায় আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন কারা কর্মকর্তা ও রক্ষীরা। ইতোমধ্যে চার হাজার ৪৯৩ জন পুরুষ ও নারী কারারক্ষীকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২১১ জন কারা কর্মকর্তাকে দেশে এবং ৮ জন কারা কর্মকর্তাকে বিদেশে টেরোরিজম প্রতিরোধ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের কারাগারগুলোতে কর্মরত বাকি ৪ হাজার ২১৫ জন পুরুষ ও নারী কারারক্ষীকে এই প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে। একইসঙ্গে কারাগারগুলোকে সিসিটিভি মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, জঙ্গিদের বিষয়ে সবসময়ই সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কারা অধিদফতরকে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনার অংশ হিসেবে কারাবন্দিদের মধ্যে জঙ্গি সম্পৃক্ততা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জঙ্গি প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দফতর, মার্কিন দূতাবাস এবং বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় এসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কারাগারে যাওয়ার পর বেশিরভাগ বন্দিই ধর্মচর্চা বেশি করেন। আর এক্ষেত্রে মেলামেশার সুযোগটি নিতে চায় জঙ্গিরা। তাই কোনও অবস্থাতেই যাতে জঙ্গিরা সেই সুযোগ নিতে না পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কারা সদর দফতরকয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক থেকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ করতে হবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংঘটিত হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশের ভিত্তিতে করা মামলাগুলোর তদারকি কার্যক্রম বাড়াতে হবে। যেসব মামলা তদন্তাধীন বা আদালতের আদেশে স্থগিত আছে, সেসব মামলার দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলসহ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে। পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ও এনটিএমসি,আইনশৃঙ্খলা বিভাগকে এই উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে বিশেষ কোনও মতামত বা সুপারিশ থাকলে তা মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত জানাতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ, নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সারা দেশে সাধারণ জনগণ, জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, গ্রাম পুলিশ, গণ্যমান্য ব্যক্তি, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে উদ্বুদ্ধকরণ সভার কার্যক্রম,প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে তাগাদা দেওয়া হয়।

কারা অধিদফতরের আইজি (প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারারক্ষীদের একটা মৌলিক প্রশিক্ষণ হয়, সেটাতে একটা বড় প্রশিক্ষণ হচ্ছে আত্মরক্ষামূলক। ইতোমধ্যে প্রায় ৮ হাজার কারারক্ষীকে দাঙ্গা মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কী কী ধরনের কত জঙ্গি আছে, সেটা আমাদের কাছে কারাগার অনুযায়ী তালিকা করা আছে। আমাদের জায়গার সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও বিভিন্ন গ্রুপ যাতে একসঙ্গে না থাকে, অর্থাৎ বিভিন্ন মতাদর্শের লোক যাতে একসঙ্গে হয়ে না যায়, এটার জন্য নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। কিছু দিন পরপর তাদের ওয়ার্ড বা সেল পরিবর্তন করা হয়। কারণ, যারা বিচারাধীন বন্দি, তাদের তো চাইলেই কারাগার পরিবর্তন করা যায় না। স্থানীয় আদালতের একটা আদেশ থাকে। সাজা হয়ে গেলে আমরা সরিয়ে দেই। বিচারাধীন সাধারণ বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার যে নিয়ম, জঙ্গি বন্দিদের ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।’

আইজি প্রিজন্স বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যেসব নির্দেশনা দেয় সেগুলো আমরা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করি। একইসঙ্গে কারাগারগুলোকে আমরা সিসিটিভি মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। সেই মনিটরিংটা যাতে আমরা ঢাকায় বসে অধিদফতর থেকে দেখতে পারি, এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ৮টি কারাগারকে অধিদফতর থেকে মনিটর করছি। পর্যায়ক্রমে সব কারাগারকে অধিদফতরের মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’