ই-পাসপোর্ট চালুর দুই বছরেরও বেশি সময় পর অবশেষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ থেকে চালু হচ্ছে ইলেকট্রনিক গেট। ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে এই ই-গেট দিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড সময় লাগবে। কোন ধরনের কথাবার্তা বা ঝুটঝামেলা ছাড়াই একজন যাত্রী ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বিদেশ যাত্রা করতে পারবেন।
আজ সন্ধ্যায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মাহবুব আলী আনুষ্ঠানিকভাবে ছয়টি ই-গেট উদ্বোধন করবেন। এই গেট সংযোজনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমেজ বৃদ্ধি পাবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের ইমিগ্রেশন সেক্টরে সর্বাধুনিক সংযোজন হচ্ছে ই-পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টধারীকে বিমানবন্দরের
ইমিগ্রেশন পার হতে খুবই সামান্য সময় ব্যয় করতে হয়। ই-পাসপোর্টে ই-ভিসা থাকলে ওই যাত্রীকে ইমিগ্রেশন অফিসারেরই মুখোমুখী হতে হয় না। ই-গেট ব্যবহার করে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় যাত্রীর সব তথ্য যাছাই করে তাৎক্ষনিকভাবে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়। এ জন্য পাসপোর্টে কোন সীল দেয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। ব্যবস্থাও থাকে না। তবে সাধারণ এমআরপি পাসপোর্টধারীরা এই সুবিধা পাবে না। শুধুমাত্র ই-পাসপোর্ট ধারী যাত্রীরাই ই-গেট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে প্রথমে ই-গেটের প্রবেশপথে ই পাসপোর্টে প্রথম পৃষ্ঠা যেখানে ছবি ও অন্যান্য তথ্য ও বারকোড রয়েছে সেই পৃষ্ঠাটি স্ক্যান করতে হবে। স্ক্যানের সাথে সাথে তথ্যগুলোয় স্বয়ংক্রীয়ভাবে যাছাই করা হবে। সব ঠিক থাকলে ই গেটের প্রথম ধাপ খুলে যাবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের সামনে নির্দিষ্ট স্থানটিতে দাঁড়িয়ে মাথার উপর বরাবর থাকা ক্যামেরার দিকে তাকাতে হবে। ক্যামেরাযুক্ত ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে যাত্রীর তাৎক্ষণিক পাওয়া মুখমণ্ডল মিলে গেলে দ্বিতীয় গেটও খুলে যাবে। সার্ভার এবং সিস্টেম ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এই দুইটি ধাপ সম্পন্ন হবে। একই সাথে সম্পন্ন হবে যাত্রীর ইমিগ্রেশন। তবে কোনও কারণে ই-পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে বর্তমান মুখমণ্ডল না মিললে ই-গেট খুলবে না। সেক্ষেত্রে যাত্রীকে ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখোমুখী হয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। তবে যে সব দেশে ই ভিসা নেই সেখানের ভিসা যাছাই করতে ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে গিয়ে ম্যানুয়েলি কাজ সারতে হবে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬টি ই গেটের মধ্যে ৩টি বিদেশগামী যাত্রীদের যাওয়ার ক্ষেত্রে এবং ৩টি বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে। ছয়টি গেটই স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যমান লোকবল দিয়েই ই গেট পরিচালনা করা হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সর্বাধুনিক ই-পাসপোর্ট রয়েছে পৃথিবীর ১১৯টি দেশে। ২০২০ সালের ৮ জুলাই চট্টগ্রামে ই পাসপোর্ট প্রদান শুরু হয়। বর্তমানে এমআরপি’র (মেশিন রিডেবল পাসপোট) পাশাপাশি ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে। ই পাসপোর্ট প্রবর্তণের ধারাবাহিকতায় গত ৭ জুন সর্বাধুনিক স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থা বা ই-গেট ব্যবস্থা চালু করা হয়। শুরুতে ঢাকা আন্তর্র্জাতিক বিমানবন্দরে ই গেট স্থাপন করা হলেও আজ থেকে চট্টগ্রামও বিশ্বের সর্বাধুনিক ইমিগ্রেশন পদ্ধতি শুরু হচ্ছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তাসলিম আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ সন্ধ্যা থেকে ই গেট চালু করা হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মাহবুব আলী ৬টি ই-গেট এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা রয়েছে বলেও তিনি জানান।