নিবন্ধন করা প্রত্যেক হজযাত্রীর এখন থেকে আলাদা ‘হেলথ প্রোফাইল’ তৈরি করবে সরকার। এতে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য থাকবে। যা পাওয়া যাবে অনলাইনে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেবেন বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এ ধরনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্য ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে হজ এবং ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এমনকি প্রাক-নিবন্ধনে দেওয়া হজযাত্রীদের ট্র্যাকিং নম্বরের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসেই সৌদি আরবে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর তাৎক্ষণিক অবস্থান ও সার্বিক তথ্য জানা যাবে। উল্লিখিত বিষয়সহ হজ ও ওমরাহ সংক্রান্ত যাবতীয় নতুন তথ্য জাতিকে জানাতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় হজ-ওমরাহ সম্মেলন। আগামী ১৭-১৯ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হবে এ মেলা। এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) আয়োজনে এই সম্মেলনের প্রথম দিন সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনে আলোচনা সভা, সেমিনার এবং হজ ও ওমরাহ মেলা থাকবে। মেলায় কয়েক শ স্টলে এজেন্সি মালিকরা নিজ নিজ এজেন্সির সুযোগ-সুবিধা সংবলিত হজ ও ওমরাহ প্যাকেজ প্রকাশ করবেন। হজ ও ওমরায় যেতে আগ্রহী ব্যক্তিরা সুবিধামতো প্যাকেজ বুকিং দিয়ে মেলায় তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করতে পারবেন। এ জন্য মেলায় ব্যাংক ও আইটি সেবাসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও থাকবে। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম। নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব তথ্য জানান। হজ ও ওমরাহ মেলা প্রসঙ্গে হাব সভাপতি বলেন, হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত হজ ও ওমরাহ গমনেচ্ছুক ব্যক্তিদের কম টাকা নেওয়াসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখান এক ধরনের মধ্যস্বত্বভোগী দালাল। তাদের খপ্পরে পড়ে অনেক সময় প্রতারণার শিকার হন অনেক হজ ও ওমরাহযাত্রী। এসব ফড়িয়া ও দালালদের ঠেকাতে এবং হজযাত্রী ও এজেন্সি মালিকদের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতেই মূলত এই মেলার আয়োজন। এই মেলায় এজেন্সি মালিকরা নিজেদের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নানা ধরনের হজ ও ওমরাহ প্যাকেজ ঘোষণা করবেন। এজেন্সি মালিকদের এক বা একাধিক স্টলও থাকবে মেলায়। এসব প্যাকেজের তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করে যে কোনো ব্যক্তি হজ বা ওমরাহে যেতে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করতে পারবেন। এ ছাড়া হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় আরও কী ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে বা আনা হবে সেসবেরও যাবতীয় তথ্য মিলবে ওই মেলায়।
মেলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, সনাতনী হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে একটি আইটিনির্ভর আধুনিক ও যুগোপযোগী ব্যবস্থা গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। হজ ব্যবস্থাপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াও অন্যতম উদ্দেশ্য। যেখানে কোনো মধ্যস্বত্ব¡ভোগী থাকবে না। হজ ও ওমরাহ নিয়ে কোনো অনিয়ম-অভিযোগ থাকবে না। গত কয়েক বছরে হজে অনিয়ম ও হয়রানি অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হয়েছে। আগামীতে তা জিরো টলারেন্সে নামানো হবে।
এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশ। হজ অনুষ্ঠানের অধিকাংশ বিষয়ে আইটিনির্ভরতা এবং মৌলিক বৈশিষ্ট্য অনেকাংশে পরিবর্তন হয়েছে। এর (হজ) সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে হজযাত্রীসহ বিভিন্ন এজেন্সিকে জানানো প্রয়োজন। এই আয়োজনে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সেমিনার, উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রদর্শন করা হবে। হজ এজেন্সিগুলোকে বাংলাদেশ ও সৌদি পর্বের আইটি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মেলায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রকে ছয়টি জোনে ভাগ করা হবে। হাব সভাপতি আরও বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দোহাইলান ও বিমান সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।