দেশে ডলার সংকট চলমান। এ সংকট দূর হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ডলার সংকটের মধ্যেই নেতিবাচক ধারায় রেমিট্যান্স প্রবাহ। বৈধ পথে ধারাবাহিকভাবে কমছে প্রবাসী আয়ের ধারা। চলমান এ পরিস্থিতিতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শিথিল করা হয়েছে এর আগে থেকে থাকা নানা শর্ত। এর ফলে আগামীতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়বে, এমনটাই বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স না বাড়াকে অশনি সংকেত হিসেবেই দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। চলতি অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এলেও পরের দুই মাসে ধারাবাহিকভাবে কমে যায় রেমিট্যান্স আসার গতি। অর্থাৎ জুলাই ও আগস্ট মাসে দুই বিলিয়ন করে রেমিট্যান্স এলেও পরে দুই মাস সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স আসে। এমনিতেই ডলার সংকট এর মধ্যে প্রবাসী আয় কমায় অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নড়েচড়ে বসে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে বিভিন্ন শর্ত শিথিল, চার্জ ফি মওকুফসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-
# বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া।
# রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া।
# রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজীকরণ।
# অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা।
# ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধকরণ।
# রেমিট্যান্স প্রেরণে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি বছরের শেষ দুই মাসে রেমিট্যান্স তার আগের মাসের চেয়ে কম এসেছে। তবে সার্বিকভাবে গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম চারমাসে দুই দশমিক শূন্য তিন শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্সের প্রবাহে হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে। প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে আশা করা যায় আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এর পরের মাস সেপ্টেম্বর কমে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ বা এক দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার আসে। সদ্য বিদায়ি অক্টোবর মাসেও রেমিট্যান্স আরও নিম্নগামী। এ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৪ টাকা হিসাবে) এর পরিমাণ ১৫ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। গত ৮ মাসের মধ্যে এটিই (অক্টোবরের রেমিট্যান্স) প্রবাসীদের পাঠানো সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স।
এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়া আগের দুই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমে যায় সেপ্টেম্বরে। আর অক্টোবর মাসে আরও কমলো রেমিট্যান্স। জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। এরপরের মাস আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। তবে সেপ্টেম্বর মাস থেকে রেমিট্যান্সে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে।