সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় অসচ্ছল নারীদের জন্য খাদ্য সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশের ১০ লাখ ৪০ হাজার অসচ্ছল নারীকে প্রতি মাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে এসব চাল বিতরণ শুরু হবে। এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। গতকাল থেকেই অনলাইনে আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট প্রোগ্রামের (ভিডব্লিউবি)’ আওতায় এসব চাল বিতরণ করা হবে।
গতকাল সোমবার ২০২৩-২৪ সময়ের জন্য চালু করা নতুন এই কর্মসূচির উপকারভোগী নির্বাচনের জন্য ভিডব্লিউবি এমআইএস ওয়েব পোর্টাল এবং ভিডব্লিউবি অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে। সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ওয়াহিদ্দুজামানসহ এটুআই ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, এই কর্মসূচিতে উপকারভোগী হবেন অসচ্ছল, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা নারী। যাদের পরিবারের নিয়মিত উপার্জনক্ষম সদস্য বা নিয়মিত আয় নেই, যারা ভূমিহীন অথবা নিজ মালিকানায় জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ১৫ শতকের কম। তবে তাদের বয়স হতে হবে ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া যেসব পরিবার দৈনিক দিনমজুরি হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে এবং মাটির দেয়াল, পাটকাঠি বা বাঁশের তৈরি ঘরে থাকে এমন পরিবারের নারীরা। যে পরিবারে কিশোরী বা ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়ে, অটিজম বা প্রতিবন্ধী সন্তান এবং বিদেশ থেকে প্রত্যাগত অভিবাসী রয়েছেন—এমন নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট প্রোগ্রাম হচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়িত দেশের গ্রামীণ দুস্থ নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি বৃহত্তর সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি। তবে নতুন কর্মসূচিতে সারা দেশে ৬৪ জেলার ৪৯২ উপজেলার সব ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ সাল থেকে উপকারভোগী বাড়িয়ে ১৫ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ দরিদ্রবিষয়ক তথ্য অনুযায়ী উপজেলা ভিত্তিক এসব উপকারভোগী নির্বাচন করা হবে। উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহী নারীরা দেশে সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও তথ্য আপাদের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। স্থানীয় কম্পিউটারের দোকান থেকে ১০৯ ও ৩৩৩ হটলাইন নাম্বরে কল করেও আবেদন করা যাবে। তবে পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই সেখানে মোবাইল অ্যাপ ভিডব্লিউবির মাধ্যমে অফলাইনে আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে আগামী দুই বছর এই চাল বিতরণ করা হবে। এ কর্মসূচির আওতায় শুধু খাদ্য সহায়তাই নয়, সব উপকারভোগীর সঞ্চয় সৃষ্টিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য নির্বাচিত উপকারভোগীদের প্রত্যেকের নিজস্ব একটি ব্যাংক হিসাবও খুলে দেওয়া হবে। এই অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ২৪০ টাকা করে সঞ্চয় জমা করবেন উপকারভোগীরা, যা হবে তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রাথমিক মূলধন গঠন। একই সঙ্গে তাদের দেওয়া হবে যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ। সঞ্চয় করা টাকা এবং প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে এসব নারীকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা হবে। ফলে তারা আয়বর্ধক ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।
করোনা-পরবর্তী বাড়তি চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্যপণ্যের দাম বেশ বেড়েছে। আবার কাজের সুযোগও সংকুচিত হয়েছে। সম্প্রতি জীবন-যাপনের ব্যয় বেড়েছে বেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতিও সমান ছিল। গ্রামীণ পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। জীবন-যাপনের ব্যয় যতটা বেড়েছে, সে অনুযায়ী সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের আয় বাড়েনি। এ অবস্থায় সমাজের নিচের সারিতে থাকা মানুষের সহায়তা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য সহায়তার অংশ হিসেবে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।