২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১২:৩৪:০১ অপরাহ্ন


ভূতের আখড়া কলকাতা হাইকোর্ট! ১১ নম্বর এজলাসের সিঁড়ি-রহস্য শোনালেন বিচারপতি
রিয়াজ উদ্দিন:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-১০-২০২২
ভূতের আখড়া কলকাতা হাইকোর্ট! ১১ নম্বর এজলাসের সিঁড়ি-রহস্য শোনালেন বিচারপতি ভূতের আখড়া কলকাতা হাইকোর্ট! ১১ নম্বর এজলাসের সিঁড়ি-রহস্য শোনালেন বিচারপতি


সকাল থেকে রাত অবধি এজলাসেই দিন কাটে তাঁর, একের পর এক শুনানি চলতে থাকে নানা মামলার। সেই সব মামলার ‘সুবিচার’ করে অচিরেই তিনি শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হয়ে উঠেছেন বহু মানুষের। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সেই বিচারপতি যে কঠিন থেকে কঠিনতম মামলা নিয়ে ছানবিন করার পাশাপাশি এত জমিয়ে ভূতের গল্পও বলতে পারেন, তা কে জানত! আর কলকাতা হাইকোর্টের আনাচকানাচে যে এত ভূত, আত্মা ঘুরে বেড়ায়, তাই বা কে জানত!

আজ, সোমবার এমনই সব গল্পগাছার সাক্ষী থাকল কলকতা হাইকোর্ট। কিন্তু, কীভাবে শুরু হল হাইকোর্টের এই ‘ভৌতিক আড্ডা’?

সোমবার, ২০১৪ সালের টেটপ্রার্থীদের মামলার শুনানির শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পর্ষদের আইনজীবীকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যে ২৬৯ জন টেটপ্রার্থীকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, তাঁদের মামলাগুলি বিকেল চারটে থেকে সন্ধে সাতটা পর্যন্ত শোনা যেতে পারে। কারণ সোম থেকে শুক্র রোজই একটানা নানারকম মামলা থাকে। এর পরে যদি আরও ২৬৯ জনের মামলা আসে তাঁর কাছে, তবে তা নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা অসম্ভব। তাই বিকেলের পরেই চলুক মামলা।

এই কথা শুনেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন আইনজীবী বলে ওঠেন, সন্ধের পরে মামলা চলবে! হাইকোর্টের রাত মানেই তো ভয়ানক, অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায় আনাচকানাচে! অনেকে নাকি টেরও পেয়েছেন এমন সব ঘটনা! 

এ কথা অবশ্য পুরোপুরি মিথ্যা নয়। কারণ কলকাতা হাইকোর্টের ১১ নম্বর এজলাসের লাগোয়া যে প্যাঁচানো সিঁড়ি, সেখানে যে অশরীরি আত্মার আনাগোনা রয়েছে, এই গল্প বহুদিনের পুরনো। হাইকোর্টের সকলেই জানেন, অন্ধকার হলেই ওই সিঁড়ি ঘিরে গা ছমছমে এক পরিস্থিতি তৈরি হয়।

কিন্তু আজ যেন অন্য মেজাজে ছিলেন খোদ বিচারপতি। তাই এই ১১ নম্বর এজলাসের সেই কুখ্যাত সিঁড়ির কথা শুনেই গল্পের ঝুলি খুলে বসেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই সিঁড়ির ভূতুড়ে গল্পের কথা তিনিও জানেন।

বিচারপতির মুখে এ কথা শুনেই রীতিমতো নড়েচড়ে বসেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, রাতুল বিশ্বাস, সুদীপ্ত দাশগুপ্তরা। তাঁরাই সে সময়ে উপস্থিত ছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সামনে। তাঁদেরও যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, কখনও না কখনও এমন কোনও ব্যাখ্যাতীত নানা ঘটনার। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজেও কাজের জন্য অনেক রাত পর্যন্ত থাকেন আদালতে। তাহলে তিনিও কি দেখেছেন এমন কিছু!

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তখন জানান, বেশ কয়েক বছর আগে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে একদিন রাতে হাইকোর্টের একজন পুলিশকর্মী বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসে জানান, প্যাঁচানো সিঁড়িটি দিয়ে নামার সময়ে তাঁকে নাকি কেউ পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছে! ওই পুলিশ নাকি তার পরে ‘হাড় হিম করা’ দৃশ্যও দেখেছেন। এর পর থেকেই এগারো নম্বর এজলাসের পাশের ওই সিঁড়ি পথ রাত হলেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, সেখানে মোতায়েন পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয় সেই সময় থেকে। 

ভূতের গল্প মানেই চোখে ভাসে নিঝুম অন্ধকার কোনও বাঁশবন বা ভাঙাচোরা পোড়ো বাড়ি। কিন্তু খাস কলকাতা হাইকোর্টের ভিতরেও যে রয়েছে এমন ‘ভূতের বাসা’, তা কিন্তু খুব একটা অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছেন আইনজীবীরা।

দেশের সবচেয়ে পুরনো হাইকোর্ট এই কলকাতাতেই। বেলজিয়ামের ক্লোথ হলের কায়দায় বানানো এই ভবনটি অসাধারণ স্থাপত্যের জন্য হেরিটেজ বিল্ডিং-এর তকমাও পেয়েছে। এখানে বছরভর প্রচুর মানুষ আসেন বিচারের আশায়। সারা দিন অসংখ্য লোকের আনাগোনায় জমজমাট থাকে হাইকোর্ট চত্বর। কিন্তু সন্ধে নামলেই এই পাড়া যেন নিশুতপুরী। এই অদ্ভুত আবহ কলকাতার খুব কম জায়গাতেই রয়েছে। আর সেই জন্যই হয়তো কলকাতার ভূতের গল্প আরও ভালভাবে জমে উঠেছে হাইকোর্টের আনাচকানাচে।

হবে না-ই বা কেন, আলো-আঁধারি বারান্দাময় এই বাড়িতে ঘটে গিয়েছে কতই না ঘটনা! এই প্রাসাদেই কেউ পেয়েছেন ফাঁসির সাজা, কেউ বা বিচার না পেয়ে ঘুরে মরেছেন। এমন এক জায়গায় ‘ভূত’ থাকা আর কী এমন আশ্চর্যের কথা! তাই তো কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী থেকে শুরু করে সাফাইকর্মী– অনেকেরই মুখে শোনা যায় ভূত নিয়ে এসব বিচিত্র নানা কাহিনি। এদিন সেই তালিকায় নাম জুড়ল খোদ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়েরও।