ছুরি দিয়ে কুপিয়ে, হাত-মুখ টেপ দিয়ে চেপে বেঁধে, জীবন্ত অবস্থায় স্ত্রীকে মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল স্বামী। ওয়াশিংটনের এই ঘটনায় আশ্চর্যজনক ভাবে প্রাণে বেঁচেছে সেই মহিলা। উঠেও এসেছেন কবর থেকে। শুধু তাই নয়, পুলিশে ধরিয়েও দিয়েছেন স্বামীকে। ৪২ বছর বয়সি ইয়ং সুক আনের এই অভাবনীয় ‘নবজন্ম’ ঘটার পিছনে রয়েছে তাঁর হাতের অ্যাপেল ঘড়িটি ।
জানা গেছে, ইয়ং সুকের সঙ্গে তাঁর স্বামী চা কিয়ং-এর ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। তার পরেও কিয়ং নানা অছিলায় স্ত্রীর বাড়িতে যেত এবং ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত। ইয়ং সুকের মেয়ে জানিয়েছেন, মাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নিত চা কিয়ং। কোনও টাকাও দিত না। এইসব নিয়েই প্রায় প্রতিদিনের মতো বচসা বেঁধেছিল ইয়ং সুক এবং চা কিয়ংয়ের মধ্যে। ডিভোর্সের পর সুককে অবসরের সময় পাওয়া টাকা দেবে না বলে জানিয়ে দেয় কিয়ং।
এই নিয়ে ইয়ং সুক প্রতিবাদ করতেই বাড়িরই একটি ছুরি নিয়ে স্ত্রীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চা কিয়ং। বেশ কয়েকবার মারার পরে ঘরে থাকা ডাক্ট টেপ দিয়ে স্ত্রীর মুখ, হাত, পা ভাল করে বাঁধে সে। ঠিক এই সময়েই নিজের হাতের অ্যাপল ওয়াচ থেকে বিপদকালীন নম্বর ৯১১ ডায়াল করে বসেন ইয়ং। মুখ বাঁধা, তাই গোঙানির আওয়াজ ছাড়া কিছুই পৌঁছয়নি অন্য প্রান্তে।
এই সময়ে ইয়ংকে অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহার করতে দেখে ফেলে স্বামী। সঙ্গে সঙ্গে সে হাতুড়ি দিয়ে মেরে ভেঙে দেয়সেই ঘড়ি, সঙ্গে স্ত্রীর কব্জিও। এই অবস্থায় গাড়িতে করে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে কাছাকাছি একটি জঙ্গলে জ্যান্ত অবস্থায় কবর দিয়ে দেয় চা কিয়ং।
তবে এত কিছু করেও পরিকল্পনা সফল হয়নি কিয়ং-এর। প্রবল গায়ের জোরে এবং মনের জোরে, কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় মাটি সরিয়ে সেই কবর থেকে কোনওরকমে বেরিয়ে আসেন ইয়ং সুক। ততক্ষণে শ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে তাঁর, হাত-পা-মুখ সব বাঁধা। চিৎকার করে কাউকে ডাকা, ছুটে পালানো– সবই অসম্ভব। তাহলে কি শেষরক্ষা হবে না!
অন্যদিকে, এমার্জেন্সি নম্বরে ফোন পাওয়ার পরেই তৎপর হয় পুলিশ। কিছু শোনা না গেলেও, গোঙানি এবং ধ্স্তাধস্তির শব্দ পাওয়ার পরেই পুলিশ আন্দাজ করে, কেউ বিপদে পড়ে ফোন করছেন। ঘড়িটির লোকেশন ট্র্যাক করে সেখানে পৌঁছে যায় তারা। সেখানে পৌঁছে চমকে ওঠে পুলিশ। দেখতে পায়, হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে গোঙাচ্ছেন ইয়ং। সারা গায়ে মাটি। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
একটু ধাতস্থ হয়ে পুলিশের কাছে সব খুলে বলেন ইয়ং সুক আন। জানান, তাঁর স্বামী তাঁকে খুন করার চেষ্টা করেছেন। এর পরে কিয়ংকে গ্রেফতার করা ছিল সময়ের অপেক্ষা। চা কিয়ং-এর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টা, অপহরণ এবং ছুরি-হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। আপাতত কাউন্টি জেলে পাঠানো হয়েছে তাকে। আদালতে মামলা শুরুর পরে সব কথা জানিয়েছেন ইয়ং সুক। অভিযুক্ত চা কিয়ং-এর আইনজীবীর অবশ্য দাবি, তাঁর মক্কেলের মানসিক রোগ রয়েছে। তার জেরেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে।