২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৪:৩৭:৩১ পূর্বাহ্ন


শান্তিতে নোবেল প্রত্যাশী প্রবাসী দুই বাংলাদেশির 'স্বপ্নভঙ্গ'
ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১০-২০২২
শান্তিতে নোবেল প্রত্যাশী প্রবাসী দুই বাংলাদেশির 'স্বপ্নভঙ্গ' ড. রায়ান সাদী ও ডা. রুহুল আবিদ


শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মোহমুক্তির অবসান ঘটলো যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী দুই বাংলাদেশির চিকিৎসকের। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের শান্তিতে নোবেল পুরুস্কার প্রত্যাশীদের তালিকায় নাম ছিল যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসক ড. রায়ান সাদী। ক্যানসার রোগীসহ নানা ধরনের ভাইরাসে আক্রান্তদের নিরাময়ে বিশেষ একটি চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার করা প্রতিষ্ঠান ‘টেভোজন বায়োর’ চেয়ারম্যান ও সিইও। তিনি চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন। এর আগে ২০২০ সালে বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসক ডা. রুহুল আবিদ এবং তার অলাভজনক সংস্থা হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হ্যাফা) যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় (ইউমাস)-এর প্রস্তাবে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির বাসিন্দা রায়ান সাদী ক্যানসার রোগীসহ নানা ধরনের ভাইরাসে আক্রান্তদের নিরাময়ে বিশেষ একটি চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার করা প্রতিষ্ঠান ‘টেভোজন বায়োর’ চেয়ারম্যান ও সিইও। তিনি চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন।

পাবনায় জন্ম নেওয়া রায়ান সাদী ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৯২ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাড়ি জমান। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা-বিজ্ঞানে লিডারশিপ এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে হেলথ পলিসি এবং অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করেন।

‘নোবেল প্রাইজ ডট অর্গ’ ওয়েবসাইট চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার মনোনয়ন তালিকায় ছিল ৩৪৩টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম। এরমধ্যে ২৫১ জন ব্যক্তি এবং ৯২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নোবেল কমিটি তাঁকে এই মনোনয়ন দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে রায়ান সাদীর প্রতিষ্ঠান ‘টেভোজন বায়োর’ ওয়েবসাইট।

এর আগে গত ২০২০ সালে বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসক ডা. রুহুল আবিদ এবং তার অলাভজনক সংস্থা হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হ্যাফা) যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় (ইউমাস)-এর প্রস্তাবে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি আল্পার্ট মেডিকেল স্কুলের একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান অধ্যাপক। ওই সময়ে ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় (ইউমাস)এর নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক জিন-ফিলিপ বেলিউ এই খবরটি নিশ্চিত করেছিলেন।

২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত ২১১ জন ব্যক্তির মধ্যে আবিদ হলেন একজন। ডা. আবিদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক, এবং জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মলিকুলার বায়োলজি এবং জৈব রসায়নে পিএইচডি অর্জন করেছেন। পরে তিনি ২০০১ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে ফেলোশিপ করেন। তিনি ব্রাউন গ্লোবাল হেলথ ইনিশিয়েটিভের একজন নির্বাহী অনুষদও। হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হ্যাফা) বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহে নিযুক্ত হন ডা. আবিদ।

গত তিন বছরে তার অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩০ হাজারেরও বেশি তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বিনামূল্যে সাইটে চিকিত্সা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের ৯ হাজারেরও বেশি আরএমজি কর্মী ও সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জন্য জরায়ু ক্যান্সারের স্ক্রিনিং চিকিত্সা এবং কক্সবাজারের শরণার্থী এবং হোস্ট সম্প্রদায়ের দেড় হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা সদস্যদেরকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় হ্যাফা'র মাধ্যমে।

উল্লেখ্য, ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে প্রথম বাঙালি হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ নিয়ে ভিন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরার সুবাদে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি ও শ্রদ্ধা অর্জন করেন। তার দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের মতো বিষয় ভালো করে বোঝার আগ্রহ জন্মে খুব ছোটবেলাতেই। ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষ তথা পঞ্চাশের মন্বন্তর তিনি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছিলেন। ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণের জনক ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক।

২০২২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতলেন বেলারুশের মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী আলেস বিলিয়াতস্কি, রুশ মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল ও ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ। গত শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।

নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি বলেছে, বেলারুশের মানবাধিকার কর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি, রাশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল এবং ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজকে চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কমিটি বলেছে, নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীরা তাদের নিজ নিজ দেশে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা অনেক বছর ধরে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষায় প্রচার চালিয়ে আসছে। যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো বিষয়গুলো নথিভুক্ত করার প্রচেষ্টার জন্যও শান্তির এই নোবেলবিজয়ীরা প্রশংসিত।

মানবতাবাদী মূল্যবোধ, সামরিকায়নবিরোধী এবং আইনের শাসনের জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীরা দেশে দেশে আলফ্রেড নোবেলের শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার রূপকল্পকে পুনরুজ্জীবিত এবং সম্মানিত করেছেন; যা আজ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

শান্তিতে নোবেলজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির। সব নোবেল পুরস্কার সুইডেনের স্টকহোম থেকে ঘোষণা দেওয়া হলেও শান্তি পুরস্কার ঘোষণা দেওয়া হয় নরওয়ের অসলো থেকে। কাজটি আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাপত্র অনুযায়ীই করা হয়।

পুরস্কার হিসেবে ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার পাবেন শান্তিতে এই নোবেলজয়ী। এর আগে, গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন দুই সাংবাদিক। তারা হলেন ফিলিপিনো সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ।

সাহসিকতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় তাদের।

১৯০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ১০২ বার। এর মধ্যে বিশ্বের সংকটপূর্ণ নানা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২৫ বার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় বিভিন্ন সংস্থাকে।

নোবেলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দুবার তিন ব্যক্তি যৌথভাবে শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত শান্তির নোবেল পেয়েছেন ১৮ জন নারী। তবে নোবেলে শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন লি ডাক থো।