২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০১:২১:৫৩ অপরাহ্ন


আল্লাহ যেভাবে ক্ষমার হাত বাড়িয়ে দেন
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১০-২০২২
আল্লাহ যেভাবে ক্ষমার হাত বাড়িয়ে দেন ফাইল ফটো


আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। মানুষের কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেই তিনি ক্ষমা করে দেন। ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হচ্ছে আল্লাহর কাছে নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। মানুষ কখন কিভাবে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন তার অসংখ্য বর্ণনা এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জবানে।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে অত্যাধিক মায়া করে ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। কোনো মানুষকেই যেন জাহান্নামে যেতে না হয়, সে ভালোবাসা থেকেই বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার ক্ষমার এ আহবান। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু মুসা আবদুল্লাহ বিন কায়স আল আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, পশ্চিম দিক থেকে সুর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত) মহান আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রাতে তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকেন, যাতে দিনের গুনাহগার লোকেরা তাওবা করে নিতে (তাঁর দিকে ফিরে আসতে) পারে। আবার প্রতিদিন তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকেন যাতে রাতের গুনাহগার লোকেরা তাওবা করে নিতে (তাঁর দিকে ফিরে আসতে) পারে। (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলার নেয়ামত ভোগকারী সব মানুষকে তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ে সব সময় তার কাছে তাওবা করে ফিরে আসা উচিত। কেনন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওবার গুরুত্ব বুঝাতে তিনি নিজেই প্রতিদিন একশত বার তাওবা করতেন বলে জানিয়েছেন।

হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দিন ও রাতে মহান রবের কাছে বেশি বেশি ইসতেগফারই হতে পারে ক্ষমা পাওয়ার উপায়। তাই বেশি বেশি ইসতেগফার করুন-

১. أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।' (মিশকাত)

২. أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।' (বুখারি)

৩. رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।'

অর্থ : 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তওবা কবুলকারী করুণাময়।'

নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।' (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

৪. أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : 'আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'

অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তওবাহ করে) ফিরে আসি।'

নিয়ম : দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।' (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

৫. সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।'

অর্থ : 'হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।'

নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।' (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজির শেখানো উপায়ে ক্ষমা চাওয়ার তাওফিক দান করুন। ক্ষমার মাধ্যমে পরকালীন জীবনে সফলতা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।