২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:০৭:১৪ পূর্বাহ্ন


কনডেম সেলেই থাকতে হবে ওসি প্রদীপকে
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০২-২০২২
কনডেম সেলেই থাকতে হবে ওসি প্রদীপকে কনডেম সেলেই থাকতে হবে ওসি প্রদীপকে


অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে। একই দায়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক এসআই লিয়াকত আলী। রায় ঘোষণার পরই তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসবে। 

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন নিতে হয়। সেক্ষেত্রে অধস্তন আদালতের মামলার রায়, তদন্ত প্রতিবেদন, এজাহারসহ সব নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠানো হয়ে থাকে। রায়দানকারী বিচারক কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল দ্রুত এই ডেথ রেফারেন্স নথি হাইকোর্টে প্রেরণ করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এলে তা যাচাই-বাছাই করে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা। মামলার সব নথি ক্রমানুসারে সাজিয়ে প্রস্তুত করা হয় পেপারবুকের জন্য। আর এই পেপারবুক প্রস্তুত করা হয় সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসে। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে পেপারবুক প্রস্তুত হলেই ডেথ রেফারেন্স ও আসামির আপিল শুনানি হবে সালের ক্রম অনুযায়ী। উচ্চ আদালতে মামলাজটের কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি। বর্তমানে হাইকোর্টে ২০১৫/২০১৬ সালে অধস্তন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি চলছে। সেই হিসাবে সালের ক্রম অনুযায়ী মেজর সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য ২০২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বিচারপ্রার্থীদের। সে পর্যন্ত তাদের কারাগারের কনডেম সেলে কাটাতে হবে।

তবে এর আগেও শুনানি করা সম্ভব, যদি রাষ্ট্র বা সুপ্রিম কোর্ট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডেথ রেফারেন্স শুনানির উদ্যোগ নেয়। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বা বিজি প্রেস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক প্রস্ত্তত করে থাকে। পেপারবুক প্রস্ত্তত হলেই অধস্তন আদালতের রায় ঘোষণার দুই বছরের মধ্যেই ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি সম্ভব বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক নিম্ন আদালতে কোনো মামলায় আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠাতে হয়। এই ধারা মোতাবেক, যখন দায়রা আদালত থেকে কোনো মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়, তখন সেই মামলার যাবতীয় কার্যধারা হাইকোর্ট বিভাগে দাখিল করতে হয়। হাইকোর্ট বিভাগ থেকে সেই মৃত্যুদণ্ডাদেশকে নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, ২০১৫ সালে নিম্ন আদালত থেকে ১১৪টি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। আর আগের বছরগুলোর অনিষ্পন্ন ডেথ রেফারেন্স ছিল ৩৬৩টি। সব মিলিয়ে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল ৪৭৭টি। ঐ বছর নিষ্পত্তি হয় ৫৮টি। অনিষ্পন্ন ছিল ৪১৯টি। ২০১৬ সালে ১৬১টি, ২০১৭ সালে ১৭১টি, ২০১৮ সালে ১৫৪টি, ২০১৯ সালে ১৬৪টি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এই চার বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৯৪টি। আর গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত হাইকোর্টে বিচারাধীন ডেথ রেফারেন্স মামলার সংখ্যা ৭৭৫টি। গত দুই বছরের অধস্তন আদালতে বিপুলসংখ্যক আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। অপরাধের গভীরতা বিবেচনায় নিয়ে বিচারকরা এই দণ্ড দিয়েছেন। সেই হিসাবে ডেথ রেফারেন্স মামলা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে সিনহা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছে আরো ছয় আসামিকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক এই রায়ে কোনো পরিবর্তন না এলে দণ্ডিতদের ৩০ বছর সাজা ভোগ করতে হবে।

রাজশাহীর সময় / এম জি