অল্প উপদেশ কিংবা আমল যে কারো নাজাতের জন্য যথেষ্ট। যদি তা যথাযথ হয়। কথার সঙ্গে কাজের মিল হয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এ রকম অসংখ্য উপমা তুলে ধরেছেন। সবই মুসলিম উম্মাহর মুক্তি ও কল্যাণের জন্য। উম্মতে মুহাম্মাদির কল্যাণ ও মুক্তির জন্য। ইহুদি-নাসারারা যে কাজটি করতো মুসলিম উম্মাহর সে কাজটি করা যাবে না। শুধু উপদেশ দেওয়া নয় বরং আমলও করতে হবে। এমনটিই এসেছে কোরআনের দিকনির্দেশনায়।
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এমন সব ঘটনাও তুলে ধরেছেন, যা আগের আসমানি কিতাবগুলোতে ছিল। আবার সেসব কিতাবের অনুসারীরা কোন বিষয়গুলো নিজেদের ইচ্ছা মতো ব্যবহার করছে তাও বলেছেন।
ইহুদিদের প্রতি নির্দেশ ছিল- তোমরা ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহ তাআলার উপর, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর; নামাজ কায়েম কর, জাকাত আদায় কর এবং মুসলমানদের সঙ্গে নামাজের জামাতে শামিল হও। এগুলো ছিল পূর্ববর্তী আয়াতের নির্দেশ। ইহুদিরা যখন এ নির্দেশকে অমান্য করে তখন তাদের লক্ষ্য করে আমলের বিষয়টি তুলে ধরলেন। আর এটি উম্মতে মুসলিমার জন্যও খুব জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اَتَاۡمُرُوۡنَ النَّاسَ بِالۡبِرِّ وَ تَنۡسَوۡنَ اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ تَتۡلُوۡنَ الۡکِتٰبَ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ
‘তোমরা কি মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব তেলাওয়াত কর। তোমরা কি বুঝ না?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৪)
সুতরাং শুধু সৎ কাজের আদেশ দিয়ে বসে থাকলেই চলবে না বরং নিজেদেরও আমল করতে হবে। তবেই মিলবে মুক্তি। এ আয়াতেও বলা হয়েছে, তোমরা মানুষদের সৎ কাজের আদেশ দিয়ে থাক। অথচ আল্লাহ তাআলা তোমাদের কিতাব তাওরাতে শেষ নবি ও তাঁর প্রতি প্রেরিত গ্রন্থ কোরআনের উপর ঈমান আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, সে নির্দেশ তোমরা পালন করছ না। এবং যে সত্য প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন তা মানুষের মাঝে প্রকাশ করছ না। তাই এ আয়াতে আল্লাহ তাদেরকে প্রশ্ন করে বলেন, এ স্ববিরোধী নীতি যে কত বড় অন্যায়, তা কি তোমরা উপলব্দি করো না?
তাফসিরে এসেছে, মদিনায় কোনো কোনো ইহুদি তাদের সম্প্রদায়ের লোকদের গোপনে ইসলাম কবুল করতে উদ্বুদ্ধ করতো, ইসলামের সত্যতা স্বীকার করে মানুষকে ইসলাম গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করতো, কিন্তু তাদের কেউ কেউ উপদেশ দিলেও নিজেরা ইসলাম কবুল করতো না। এ আয়াতের সম্বোধন তাদেরকেও করা হয়েছে।
ঠিক এভাবে প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই শুধু উপদেশ নয়, বরং উপদেশের পাশাপাশি আমলও করতে হবে। তবেই এ আয়াতের হক বাস্তবায়ন হবে। দুনিয়ার সফলতার পাশাপাশি পরকালের মুক্তি মিলবে সহবে। তাই যার মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেবে, তারা নিজেরাও সৎ কাজের অন্তর্ভূক্ত হবে। যারা এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে না তাদের জন্যই এ আয়াত সতর্কবাণী।
আল্লাহ তআলা সবাইকে কথা ও কাজে মিল রেখে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।