২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০১:৫৫:১৮ অপরাহ্ন


হঠাৎ কিরগিজস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ, নিহত ২৭
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৯-২০২২
হঠাৎ কিরগিজস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ, নিহত ২৭ ফাইল ফটো


মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের সীমান্তে সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান সীমান্ত সংঘর্ষের পর এবার কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের সবাই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮৭ জন।

মধ্য এশিয়ায় সাবেক দুই সোভিয়েত রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাত নিয়মিত ঘটনা। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এ দুই দেশের দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে। তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদন মতে, চলতি সপ্তাহে আবার সংঘাত শুরু হয়। কিন্তু শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সেটা ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছায়। ভারী ট্যাংক, কামান ও রকেট লঞ্চারের মতো অস্ত্র নিয়ে লড়াই চলে উভয়পক্ষের বাহিনীর মধ্যে। গোলার শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তজুড়ে।

কিরগিজস্তানের আঞ্চলিক রাজধানী বাতকেনে রকেট হামলা চালায় তাজিক যোদ্ধারা। এমন অভিযোগ এনে দেশটির জরুরি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, 'তীব্র সংঘর্ষে হতাহত এড়াতে সীমান্ত এলাকা থেকে নিজেদের ১ লাখ ৩৬ হাজার বেসামরিক মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ'।

কিরগিজস্তানের অভিযোগ, তাজিকিস্তানের সেনারা প্রথমে তাদের সীমান্তচৌকি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করে। জবাবে কিরগিজ সেনারাও পাল্টা গুলি চালায়। এক বিবৃতিতে কিরগিজ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে, তাদের বাহিনী তাজিক হামলা প্রতিহত করে যাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় তীব্র সংঘর্ষ চলছে।

এদিকে সংঘর্ষ শুরু করার জন্য কিরগিজ পক্ষকে দায়ী করেছে তাজিকিস্তান কর্তৃপক্ষ। পাল্টা অভিযোগ এনে তারা দাবি করছে, কিরগিজ বাহিনী তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে। পাশাপাশি আমাদের সীমান্তবর্তী তিনটি সীমান্তবর্তী গ্রামে ব্যাপক গুলি চালিয়েছে।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কিরগিজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, সপ্তাহব্যাপী চলমান সংঘর্ষে কিরগিজস্তানে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে তাজিকিস্তানে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আরও অন্তত ৮৭ জন আহত। সংঘাতকবলিত এলাকা থেকে সরানো হয়েছে ২০ হাজার মানুষকে।

কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সংঘর্ষ বন্ধে দুই দেশ একটি যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিলেও তা দ্রুত ব্যর্থ হয়েছে। দুই দেশের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শত্রুতা অবসানে সহায়তার অংশ হিসেবে উভয়পক্ষ একটি যৌথ পর্যবেক্ষণ গ্রুপ প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে। এরপরও সীমান্তে সংঘর্ষ অব্যাহত আছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার চলতি সপ্তাহের সীমান্ত সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ২০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দেশ দুটির কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুই বছর আগে সামরিক সংঘাতের পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ। সীমান্তবর্তী নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সবশেষ ২০২০ সালে সংঘাতে জড়িয়েছিল দুই দেশের সেনাবাহিনী।

প্রতিবেশী দেশ দুটির সীমান্তে গত মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ফের সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। তিন দিন পর বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। তবে সংঘাতের জন্য একে অপরকে দায়ী করে আসছে উভয়পক্ষ।

সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা নিয়ে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আর্মেনিয়া বলেছে, আজারবাইজানের সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের অন্তত ১৩৫ জন সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে আজারবাইজান নিহতের নতুন সংখ্যা প্রকাশ করে জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৭১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭।