২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০২:৫৬:২০ অপরাহ্ন


সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৯-২০২২
সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু


সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের মাটিকোড়া গ্রামে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে দুই ভাই ও বাবা-ছেলেসহ একই পরিবারের পাঁচজনসহ ৯ জনের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে গ্রামটি।

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) মাটিকোড়া গ্রামে গিয়ে এমনই দৃশ্যের দেখা মেলে। এই গ্রামেরই শিশু ও কিশোরীসহ চারজন মারা গেছে। আহত হয়ে হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছে আরও চার শিশু। 

মাটিকোড়া গ্রামের মৃতরা হলেন- নুরুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম (৪০), বাহাদুর আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (৬০), আলিম মিয়ার মেয়ে রত্না খাতুন রিতু (১২) ও মোস্তফার মেয়ে মারিয়া (৭)। এছাড়া আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধঅন রয়েছে- নূরনবীর মেয়ে নূর জাহান (৯) ও তার বোন নূর নাহার নদী (১২), সাইফুল প্রামানিকের মেয়ে রুপা (১২) ও রফিকুল ইসলামের মেয়ে আমিনা (১৩)। এর মধ্যে নূর নাহার নদী গুরুতর অবস্থায় খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে।

মৃত রিতুর বাবা আব্দুল আলিম বলেন, আমার মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের একটি ডোবাতে গোসল করতে যায়। কিন্তু ডোবায় কচুরিপানা থাকায় দেখতে পায় পাশেই শ্যালোইঞ্জিন চালিয়ে জমিতে পানি দেওয়া হচ্ছে। তখন সেখানে সে গোসল করতে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে বৃষ্টি শুরু হলে, সে শ্যালো ঘরের ছাপড়ার নিচে দাঁড়ায়। ঠিক সে সময় বজ্রপাত হয়। আমরা খবর পেয়ে গিয়ে দেখি, রিতু কাঁদা পানিতে পড়ে আছে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

মৃত শাহ আলমের বাবা নুরুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, আমার ছেলে শিবপুর গ্রামের মানুষের কাছে বোরো ধানের চারা বিক্রি করে। তারা সেই চারা তুলতে আসলে শাহ আলমও তাদের সঙ্গে যায়। এরপরই বৃষ্টি শুরু হয়। পরে আমরা জানতে পারি, শাহ আলম বজ্রপাতে মারা গেছে। শাহ আলমের সঙ্গে একই গ্রামের আরও তিনজন মারা গেছে। মারা গেছেন চারা তুলতে আসা শিবপুর গ্রামেরও ৫ জন।

মৃত মারিয়ার বাবা বলেন, আমি কাজে ছিলাম। এর মধ্যে বাড়ি থেকে খবর আসে মেয়ে বজ্রপাতে আহত হয়েছে। পরে বাড়িতে এসে শুনি, আমার মেয়ে আর নেই। রাতেই তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

অন্যদিকে শোকে স্তব্ধ শাহ আলমের মা, ঋতুর মা, মারিয়ার মাসহ প্রায় সবাই। কথাও বলতে পারছেন না তারা। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শুক্কুর প্রামানিকের ছেলে মো. মানিক হোসেন বলেন, বজ্রপাত দেখে সেখানে থাকা এক শিশু দৌড়ে এসে জানায়। বজ্রপাতের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমিই প্রথমে দৌড়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি একেকজন একেক জায়গায় পড়ে আছে। এরপর ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। পরে তারা এসে সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। 

 স্থানীয় মাটিকোড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানের খাদেম আজগর আলী বলেন, রাতেই মৃতদের জানাজা শেষ করে দাফন সম্পন্ন হয়। 

পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, একই পরিবারের ৫ জনসহ ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা এলাকাবাসী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এলাকার সবার মাঝে শোক কাজ করছে। মৃতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাটাও যেন কারো জানা নেই। 

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে দুইজন সম্পর্কে আপন ভাই ও চারজনের পিতা-পুত্র সম্পর্ক রয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে 

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে এক শিশু ও কিশোরীও রয়েছে। এ সময় আহত হয় আরও ৪ জন।