২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:৪৮:৪৭ পূর্বাহ্ন


‘সনদ বাণিজ্য’ করে কোটিপতি: স্বামীর পর এবার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২২
‘সনদ বাণিজ্য’ করে কোটিপতি: স্বামীর পর এবার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ফাইল ফটো


রাজশাহীর এক নারীর সারাজীবনের মোট আয় ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫৪ টাকা। তবে তার সম্পদের পরিমাণ ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩২২ টাকার। তার বিরুদ্ধে ৭৯ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৩ টাকার আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এই নারীর নাম মারুফা খানম (৪৮)। নগরীর গোরহাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা তিনি। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোমবার দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার বাদী এ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আমির হোসাইন।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট মারুফার স্বামী আবুল হাসনাত মো. কামরুজ্জামান মুকুলের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন। 

কামরুজ্জামান মুকুলের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৫১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯৯ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন এবং আয়বহির্ভূত ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮৪ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। একই অভিযোগে মামলা হলো তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে।

দুদক জানায়, মারুফা খানম তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন যে, তার নামে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২৫ টাকা মূল্যের স্থাবর ও ৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অর্থাৎ তার ১ কোটি ৮ লাখ ১৮ হাজার ৬২৫ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ এবং ১৯ লাখ ৫ হাজার ৫৬৪ টাকা ঋণ রয়েছে বলে দুদককে জানান।

কিন্তু অনুসন্ধানকালে দুদক জানতে পারে মারুফার নামে স্থাবর ১ কোটি ৬৪ হাজার ৬২৫ টাকার স্থাবর ও ৪ লাখ ৩০ হাজার ৫৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। মোট সম্পদ ১ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ১৬৩ টাকার। তার ঋণ পাওয়া যায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪১ টাকা। কিন্তু তিনি সম্পদ বিবরণীতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭২৩ টাকা বেশি ঋণ দেখিয়েছেন।

ঋণ বাদে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩২২ টাকার। অথচ তার বৈধ আয় পাওয়া যায় মোট ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫৪ টাকার। তার পারিবারিক ব্যয় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬২৫ টাকা। তার পারিবারিক ব্যয়সহ অর্জিত সম্পদ ৮৯ লাখ ২ হাজার ৯৪৭ টাকা। ফলে তিনি অসাধু উপায়ে জ্ঞাত-আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭৯ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৩ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে দুদক বাদী হয়ে মারুফা খানমের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারুফার স্বামী কামরুজ্জামান মুকুল রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার জোতকার্তিক বিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক। জোতকার্তিক তার গ্রামের বাড়ি। রাজশাহী নিউমার্কেট এলাকার সিটি পলিটেকনিক অ্যান্ড টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সিটি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষও তিনি। তার স্ত্রী মারুফা নগরীর রাজপাড়া থানা এলাকার আদর্শ মহিলা টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ। এসব বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন মারুফা ও তার স্বামী মুকুল।

এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ দম্পতি ‘সনদ বাণিজ্য’ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মুকুলের বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলায় সেটিও বলা হয়েছে। সম্প্রতি জোতকার্তিক গ্রামের একটি খুনের ঘটনায় আসামি হয়েছেন কামরুজ্জামান মুকুল। এরপর থেকেই তিনি পলাতক আছেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তার শ্যালক দেলোয়ার খান সাংবাদিকদের নিজেদের অনুকূলে নেয়ার জন্য তদবির করা শুরু করেছে।