বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় এবং বৃহত্তরভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার দৃঢ়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন করে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার যেকোনো প্রচেষ্টা অবিলম্বে প্রতিহত করা হবে।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভারত সফরের আগে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয়; ভারতসহ অন্য অনেক দেশ চরমপন্থা প্রত্যক্ষ করছে। ক্রমবর্ধমান উগ্রবাদের অন্যতম একটি কারণ হলো সামাজিক মাধ্যম, বর্তমানে যা ‘খুব খারাপ’ হয়ে উঠেছে।
শেখ হাসিনা এএনআইকে বলেন, ‘যতদিন আমরা ক্ষমতায় আছি, সব সময় বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। আমি সব সময় তাদের (সংখ্যালঘুদের) বলি যে আপনারা আমাদের নাগরিক। দেশকে আপনাদের ধারণ করা উচিত। কিন্তু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটলেও আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিই। কখনো কখনো খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আপনারা ভালো করেই জানেন যে এটা শুধু বাংলাদেশ নয়; এমনকি ভারতেও কখনো কখনো সংখ্যালঘুরা ভোগান্তির মুখে পড়েন।’
এএনআই বলছে, বাংলাদেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের খবরে দুর্গাপূজার প্যান্ডেল বা উপাসনালয়ে হামলার কথাও বলা হয়েছে।
হিন্দু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব বিষয়ে দেশগুলোর উদারতা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, উভয় দেশেরই (ভারত ও বাংলাদেশ) উদারতা দেখানো উচিত। বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং আমাদের এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি এখানে অনেক বেশি। তাই দু-একটা ঘটনা ঘটলেও সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিই। বিশেষ করে সরকার, আমার দল ও দলের লোকজন; এসব বিষয়ে খুবই সচেতন।’
সামাজিক মাধ্যমে ব্লগার এবং অন্যদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, এটা কাম্য নয় যে লোকেরা একে অপরকে আঘাত করার জন্য কিছু লিখবেন। আমার সরকার এ ধরনের যে কোনো কার্যকলাপ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চরমপন্থা এখন সর্বত্র। এমনকি আপনি যদি ভারত বা বিশ্বের অন্য দেশের দিকেও দেখেন, সেখানেও চরমপন্থা পাওয়া যাবে। সামাজিক মাধ্যমের কারণে বর্তমানে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা আমরা কখনোই সমর্থন করি না। প্রতিটি ধর্মের মানুষের তাদের নিজ নিজ ধর্ম সঠিকভাবে পালন করার অধিকার রয়েছে। তাই কারও এমন কোনো কথা বলা উচিত নয়, যাতে অন্য ধর্মকে আঘাত করা হয়।
এএনআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে বাংলাদেশের কিছু এলাকায় সহিংসতার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যালঘু হিন্দুদের উদ্দেশে বলেছিলেন যে, তাদেরও তার মতো একই অধিকার রয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হিন্দুদের মন্দির, দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা এএনআইকে বলেন, কিছু ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সব উৎসবে অংশ নেয়। এটা আমাদের ঐতিহ্য। আমরা সবাই একসঙ্গে সব উৎসব উদযাপন করি। বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও আমাদের সরকার অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, বিষয়টি আলোচনাধীন রয়েছে এবং সমস্যার মাত্রাও অনেক কমে গেছে। কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা ঘটে। তাই আমরা ভারতের সঙ্গে আলোচনা করছি। আপনারা জানেন, আমরা এখন ভারতীয় গরুর ওপর খুব একটা নির্ভরশীল না। নিজেদের প্রয়োজনেই আমরা বাংলাদেশে গবাদি পশুর উৎপাদন বৃদ্ধি করছি। কিন্তু কিছু সীমান্তে চোরাচালান হয়। তাই দুই পক্ষের সীমান্ত বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার চার দিনের এ ভারত সফরকে উভয় দেশেই দেখা হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে সময়-পরীক্ষিত সহযোগিতা আরও বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়েও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।