আবারও ১৫ আগস্টের মতো আঘাত আসার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আঘাত আরও আসবে, জানি। এই আঘাত হয়তো আরও সামনে আসবে। যখন আমার আব্বা দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তো ১৫ আগস্ট ঘটেছে। আজকেও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনায় জয়বাংলা ফিরে এসেছে। এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না, তারা বসে থাকবে না। তারা আঘাত করবে। বাংলাদেশকে আবারও জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করবে।’ সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রবিবার (২১ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারকে চাপ দিচ্ছে এমন ইঙ্গিত করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তাদের (বিএনপি) সঙ্গে বসতে হবে, তাদের সাথে কথা বলতে হবে। তাদের খাতির করতে হবে। তাদের ইলেকশনে আনতে হবে। এত আহ্লাদ কেন আমি তো বুঝি না। বাংলাদেশে কী আর মানুষ নেই? অনেক বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি... সেখানে থেকে এসে রিকোয়েস্ট করে, কোনোমতে তাদের একটু জায়গা দেওয়া যায় কিনা? জায়গা দেবে কি দেবে না সেটা ভাববে জনগণ। সেই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। তারা আবার সেই সন্ত্রাসের যুগে ফেরত যাবে? নাকি আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সেই উন্নয়নের যুগে থাকবে। এই সিদ্ধান্ত তো জনগণকে নিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। কেউ যদি ইলেকশন... ইলেকশন করবে কীভাবে। যে দলের নেতাই নেই। সাজাপ্রাপ্ত অথবা পলাতক। তারা ইলেকশন করবে কী, আর কীভাবে ভোট পাবে। ভোট কাকে দেখে দেবে এটাই তো প্রশ্ন। তারপরও অনেক চক্রান্ত আছে। এখনও যেমন নানারকমের চক্রান্ত। ইলেকশন সামনে এলেই শুরু হয়। কিন্তু এ দেশের মানুষের ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে।’
আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করেছে এটাই বড় অপরাধ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে উন্নয়নটা করে আজকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। হয়তো এটাই বড় অপরাধ। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত অত্যন্ত সফলভাবে দেশ চালিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলাম। সেজন্যই তো ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটিয়ে আমাকে শেষ করার একটা পরিকল্পনা। আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আজ ১৮ বছর হয়ে গেলো। যারা স্প্লিনটার নিয়ে বেঁচে আছে প্রত্যেকেই কিন্তু কষ্টভোগ করছে। যত বয়স বাড়ছে ততই তাদের শরীরের যন্ত্রণা বাড়ছে। আমি সকলের খোঁজ রাখি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে তাদের সাহায্য করি। আমার যতদূর সাধ্য করে দিয়েছে। আমি কাউকে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছি। কাউকে জমি কিনে দিয়েছি। ঘর করে দিয়েছি। মাসোয়ারার ব্যবস্থা করে দিয়েছ। প্রতিমাসে ওষুধ কেনার টাকা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারা যা হারিয়েছে সেটা তো ফেরত দিতে পারবো না। তাদের শরীরের যন্ত্রণা তো প্রশমন করতে পারবো না।’
আওয়ামী লীগ প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই যে কষ্টগুলো নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বারবার আঘাতের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু আমরা সরকারে এসে তো রিভেঞ্জ নিতে যাইনি। আমরা তো ওদের ঘরবাড়ি দখল করতে যাইনি। হাতুড়ি দিয়েও পিটিয়ে মারিনি। কারাগারেও রাখিনি। কিছুই করিনি।’
তিনি বলেন, ‘যে মামলাগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই মামলাগুলো চলছে। আর অগ্নিসন্ত্রাস করে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একেকজন খুনখারাপি করে এ দেশে থেকে পালিয়েছে। ২১ আগস্ট যারা হত্যা করেছিল তারা দেশ থেকে পালিয়েছে। ১৫ আগস্টের হত্যার সাথে জড়িতদের যাদের পেয়েছি সাজা কার্যকর করেছি, বাকিরা পালিয়েছে। এই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় কর্নেল রশিদ ও ডালিম বাংলাদেশে ছিল- এই চক্রান্তের সাথে। খালেদা জিয়া তাদের যেভাবে হোক দেশ থেকে চলে যেতে সাহায্য করে। এটা তো বাস্তব কথা। ডালিম আর রশিদ যে ঢাকায় ছিল সেটা তো অনেকেই জানে। তাদের আত্মীয়স্বজন আছে, খোঁজ নিলে জানতে পারবেন। তাদের প্রশ্ন এটাই ছিল, উনি কি মরে গেছেন নাকি বেঁচে আছেন। আমি মরিনি। তারা ভেবেছে প্রথমে অপারেশন সাকসেসফুল। আমি রক্তাক্ত অবস্থায় আর নেই। কিন্তু যখনই জেনেছে আমি মরিনি, বেঁচে আছি; তখনই রাতে তারা ভেগে গেছে। এদের কে এনেছিল? যদি বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে না করা হয় তাহলে তারা এলো, আবার চলেও গেল। এখন বিভিন্ন দেশে তারা পলাতক আছে। সেগুলোকে কী কেউ গুম হওয়া বলবে? তা তো কেউ বলবে না।